আজ মহানায়িকার মৃত্যুবার্ষিকী

সুচিত্রা সেন, বাংলা তথা ভারতবর্ষের একজন কিংবদন্তী অভিনেত্রী। তাঁর জন্মগত নাম রমা দাশগুপ্ত হলেও চলচ্চিত্র জগতে তিনি সুচিত্রা সেন নামেই ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলি আজও আপামর বাঙালীর কাছে জনপ্রিয়তার আসনে রয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রে মহানায়ক উত্তম কুমারের বিপরীতে অভিনয় করে তিনি পেয়েছিলেন বিশেষ জনপ্রিয়তা। বাংলা ছাড়াও তিনি হিন্দি ভাষায় বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি মহানায়ক উত্তমকুমারের পাশাপাশি বাঙালী মননে মহানায়িকার স্থান অর্জন করে নিয়েছিলেন। আজ সেই মহানায়িকার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়। তখন তিনি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে ফুসফুসে সংক্রমণের জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুচিত্রা সেনের শেষকৃত্যে গান স্যালুট দেওয়ার ঘোষণা করেন। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নায়িকার মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠান।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনা জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। সুচিত্রা ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। পড়াশোনাও করেছিলেন এই পাবনাতেই।
১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাঁর একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন অভিনেত্রী। সুচিত্রা সেনের অভিনয় জগতের পথচলা শুরু হয় ১৯৫২ সালে। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘শেষ কোথায়’। মহানায়ক উত্তম কুমারের বিপরীতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে। ছবিটি বক্স-অফিসে দারুণ সাফল্য লাভ করে। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় উত্তম-সুচিত্রা জুটিও। তার পর থেকে বাংলা ছবি মানেই ছিল উত্তম-সুচিত্রা জুটি। উত্তম কুমারের সাথে বাংলা ছবিতে রোমান্টিকতা সৃষ্টি করার জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী। পরবর্তী ২০ বছরে বাংলা ছবির অবিসংবাদিত জুটি ছিলেন উত্তম-সুচিত্রা।

সুচিত্রা সেন হিন্দি ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৫৫ সালে। ‘দেবদাস’ এর মতো বিখ্যাত সিনেমা দিয়েই তাঁর বলিউডে যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম ছবিতেই জিতে নিয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। ক্যারিয়ারে মোট চারটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছিলেন নায়িকা। স্বামীর মৃত্যুর পরও যিনি অভিনয় চালিয়ে গেছেন।
১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন ‘সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস’ অর্জন করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। এর পর ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে। ২৫ বছর সুনামের সঙ্গে অভিনয়ের পর ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্রকে বিদায় জানান সুচিত্রা সেন।


হিন্দি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতিবছরই দাদাসাহেব সম্মাননা প্রদান করে সরকার। অবসরের প্রায় ২৭ বছর পর ২০০৫ সালে এই পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কিন্তু দিল্লি গিয়ে ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। যার কারণে পুরস্কারটি পাওয়া হয়নি তাঁর। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করে।

 

 

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*