আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও

পিয়ালি আচার্য :

অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো/ সেই তো তোমার আলো/ সকল দ্বন্দ্ব বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো/ সেই তো তোমার ভালো।

আলোর উৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। কালীপুজো ও দীপাবলিতে শুভ শক্তির অর্চনা করব আমরা, প্রতি বছরের মতো এবারও। এবারে ১৯ অক্টোবর কালীপুজো। তার আগের দিন বাংলায় পালিত হয় ভূত চতুর্দশী। ১৪ পিদিম জ্বালিয়ে ভূত তাড়ানো হয়। যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্করা ভুত মানুন বা না-ই মানুন, ভূত থাকুক বা না থাকুক, আমাদের দেশ তথা বিশ্বের মাথা থেকে সন্ত্রাস আর সাম্প্রদায়িকতার ভূত নেমে যাক—এটাই কামনা।… বিস্তারিত

গান্ধীজিকে তো ফুল দিলেন—তাঁর আদর্শ মেনে চলেন কি?

পিয়ালি আচার্য : এই লেখা যখন লিখতে বসেছি, তখন রাত ১১টা। দিনটি হলো ২ অক্টোবর, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। আর দু-বছর হলে দেড়শো বছরে পা রাখবে গান্ধী জয়ন্তী। ঘটা করে উদ্‌যাপন করবেন সবাই এই দিনটি।

এ বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের গান্ধী জন্মদিনের দিনটিতে সকাল থেকেই দিল্লির রাজঘাটে ছিল ভিভিআইপি-দের ভিড় প্রতিবারের মতই। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি গান্ধীজির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করলেন। এই পর্যন্ত চেনা ছবি—গতানুগতিক ঘটনা।…বিস্তারিত

সন্ত্রাসের অসুর বধে তৈরি শত শত গৌরী

পিয়ালি আচার্য : আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির। শরৎকাল হলো উৎসবের মাস। আর শারদোৎসব তো রাজ্য ও দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দূর বিদেশেও সাড়ম্বরে পালিত হয়। জগৎজননীর আগমনে সারা বিশ্বে উঠে খুশির হিল্লোল। দেশে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন ভাবে উৎসব পালন করেন এইসময়। দক্ষিণ ভারতে ‘বাথুকাম্মা’ অথবা উত্তর ভারতের ‘নভরাত্রি’-র কথা আমরা সকলেই জানি। সর্বত্রই অনাবিল আনন্দ। কিন্তু এবারে পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। সারা দেশেই যেন একটা অশান্ত গুমট অবস্থা। উৎসবের রং যেন কিছুটা ফিকে তাতে। আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনিকে ম্লান করতে চাইছে অস্ত্রে ঝনঝনানি। সারা পৃথিবীরই যেন এক গভীর অসুখ। সন্ত্রাসের বিষ ছোবল ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। লন্ডনের টিউবে এই তো সেদিন সন্ত্রাসের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠল। আমাদের দেশেও যেখানে গণতন্ত্রের ভিত অত্যন্ত মজবুত বলে মনে করা হয়, সেখানেও চলছে টানাপোড়েন। ধর্মনিরপেক্ষতার শিকড় উপড়ে ফেলতে চক্রান্ত করছে সাম্প্রদায়িক শক্তি। কালবুর্গী হত্যার স্মৃতি ভুলিনি আমরা। আর গৌরী বন্দনায় যখন আমরা মাতোয়ারা হতে চলেছি, তখনই আর এক গৌরী—গৌরী লঙ্কেশ-এর শরীর বুলেটে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয় অশুভ শক্তি। ভারত মাতার শুভ্র আঁচল ভিজে যায় রক্তে। কিন্তু গৌরীরা হারে না। হারায় না।

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বক্তব্য, কোনওরকম দাঙ্গা এখানে বরদাস্ত করা হবে না। এই দেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।’ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল বলেন, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম, ওই জিজ্ঞাসে কোন জন, কাণ্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা-র।’ এদেশে রয়েছে সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য। গণতন্ত্রের সুদৃঢ় ভিতকে নাড়ানো এখানে অত সহজ নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও চারিদিকে যেন এক অশান্ত পরিবেশ। বাংলাকেও খানিকটা নাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শারদোৎসবের মাঝেই মহরম পালিত হবে শান্তিতে—এ কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একাদশীর দিন বিসর্জন নয়। বেরোবে মহরমের তাজিয়া। বাকি সব দিন রীতি মেনে বিসর্জন। এই নিয়েও উস্কানি প্ররোচনামূলক কার্যকলাপ করে চলেছে কিছু মানুষ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কবির ভাষায় বলে থাকেন, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, বুঝে নিক দুর্বৃত্ত। এ মাটিতে সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসের কোনও প্রশ্রয় নেই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এখানে দৃঢ় গলায় বারবার বলেন, হিন্দু-মুসলমান-শিখ-খ্রিস্টান-জৈন-বৌদ্ধ—সকলের মুখ্যমন্ত্রী আমি। আমি কোনও ধর্মকে তোষণ করি না। অথচ এই দৃঢ়তা দেখাতে পারেন না কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই তো দেশের কোণায় কোণায় হিংসা দানা বাঁধে। এবং তাতে উস্কানি ও প্ররোচনা দেয় শাসকদল বা তাদের সহযোগীরা। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান।

সারা বিশ্বজুড়ে যখন একটা অস্বস্তিকর অসহিষ্ণু পরিস্থিতি চলছে, বহুবলধারিণী, রিপুদলবারিণী মা এলেন সেই সময়। আজ যেমন শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাওয়ার দিন, তেমনি শপথ নেওয়ার দিন আত্মশক্তিকে বলীয়ান হওয়ার। দেবীপক্ষে সৌহার্দ্য- সম্প্রীতি চ্যালেঞ্জ জানাক সাম্প্রদায়িক শক্তিকে। আমরা নিশ্চিত জয় হবে প্রথম পক্ষেরই। সন্ত্রাসের অসুরকে পরাজিত করতে তৈরি আছে শত শত গৌরী…