পাহাড়ের উন্নয়নে রাজনীতি নয়, রাজভবনের বৈঠকে বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

 

“যা ঘটে গেছে তা ঘটে গেছে, এবার আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এগিয়ে যেতে হবে।” পাহাড়ের রাজনৈতিক দল গুলি ও জনজাতি উন্নয়ন পর্ষদ বোর্ড গুলির সঙ্গে রাজভবনে বৈঠক সেরে এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন তিনি আরওআরও বলেন, “পাহাড়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নিজস্ব অ্যাজেন্ডা আলাদা হতেই পারে। কিন্তু পাহাড়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সব দলগুলিকে এক হয়ে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।” দার্জিলিং-এ আগামী মার্চ মাসে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিটও হবে বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে জানান মুখ্যমন্ত্রী।এদিন বৈঠকে কি কি বললেন মুখ্যমন্ত্রী দেখে নেব:

১) বৈঠক খুব ভাল হয়েছে। আমরা মার্চ মাসে এখানে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিট করব। কারন দার্জিলিং-এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি আছে। আইটি ইন্ডাস্ট্রি, হটিকালচার, ট্যুরিজম, হোটেল ইন্ডাস্ট্রি নানা রকম আছে, তাছাড়া হোম ট্যুরিজম এগুলো সমস্ত গুরুত্ব দিয়ে আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল যে সমস্ত হাউজ আছে তাদেরও আসতে অনুরোধ করব। যাতে নতুন করে আরও ইন্ডাস্ট্রি গড়া যায় তা দেখব। সিঙ্কোনাতে আমাদের ১০০০ একর জমি আছে, কি করে তা ব্যবহার করা যায় তা আমরা দেখব।

২) দার্জিলিং-এর মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে। পাহাড়ে উন্নয়নের জন্য এখানে যেমন শিল্প প্রয়োজন তেমনি, স্কিল ট্রেনিং-এর প্রয়োজন আছে। ইন্ডাস্ট্রি হাব হলে কর্মসংস্থান বাড়বে, এতে দার্জিলিং-এর নতুন প্রজন্মের ভাল হবে। সেইজন্য মার্চ মাসে দার্জিলিং-এ ইন্ডাস্ট্রি মিটিং করা হবে। আর একটা মিটিং মে মাসের শেষের দিকে কালিম্পং-এ হবে। যে ১৫ টি বোর্ড রয়েছে তারা মিলে এই মুটিং করবে। গ্রামগঞ্জ থেকে মানুষকে ডাকা হবে। সঙ্গে জিটিএ এবং মান সহ সকলেই উপস্থিত থাকবেন। এতে জনজাতির উন্নয়নে অনেকটাই সদার্থক ভূমিকা পালন করবে।

৩) আমি দার্জিলিং-এ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা বলেছিলাম। কোথায় হবে তারজন্য জমি খোঁজা হচ্ছে।

৪) এখনও পর্যন্ত পাহাড়ে যে শিক্ষকরা বেতন পাননি তাঁরা বেতন পেয়ে যাবেন তবে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস করাতে হবে। কারণ ২ থেকে ৩ মাস ক্লাস হয়নি। তাতে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হয়েছে।

৫) আমরা মিরিকে পাট্টা দেওয়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখানকার অশান্ত পরিস্থিতির জন্য সব বন্ধ হয়ে পরে আছে। ওইসব কাজ আমরা আস্তে আস্তে আবার শুরু করব।

৬) যারা ভাল খেলাধুলায় জয়ী হয়েছে, তাদের আমরা সিভিক ভল্যান্টিয়ারে নিয়োগ করেছ। আমরা এটাও দেখব যারা গোর্খাল্যান্ড পুলিশে(GLP) যারা ভাল কাজ করেছে, যাদের বিরুদ্ধে পাহাড়ে গন্ডগোলের সময় কোনও অভিযোগ নেই, তাদেরকে পুলিশে সিভিক ভল্যান্টিয়ারে নেওয়ার চেষ্টা করব।

৭) আমি চাই দার্জিলিং দার্জিলিং-এর মতই থাকুক। দার্জিলিং বিশ্বের যত গুলি পাহাড় এলাকা আছে তার মধ্যে সবথেকে সৌন্দর্যময়। আমি চাই দার্জিলিং আরও বাড়ুক।

৮)দার্জিলিং-এর সব রাজনৈতিক দল গুলির কাছে আমার আবেদন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অ্যজেন্ডা আলাদা হতে পারে, কিন্তু পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য আমাদের সবার প্রয়োজনে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

৯) যা ঘটে গেছে, তা ঘটে গেছে আমাদের এখন ওসব ভুলে গিয়ে পাহাড়ে ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাজ করতে হবে

এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেয়ারটেকার জিটিএ বোর্ডের প্রধান বিনয় তামাং, জিএনএলফের মান ঘিসিং, গোর্খালিগ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি। বৈঠকে ছিল পাহাড়ে জনজাতি উন্নয়নে তৈরি বোর্ড গুলির চেয়ারম্যানরাও। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলির নিয়ে বৈঠক করেন। এরপর ওই বৈঠকে যোগ দেন জনজাতি উন্নয়ন বোর্ড গুলির চেয়ারম্যানরা।  বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং ছেড়ে শিলিগুড়ি চলে যান। সেখানে রাত কাটিয়ে শুক্রবার কলকাতায় ফিরবেন তিনি।

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*