বছর শেষে ব্যান্ডেলে

Deserted street in Quebec City decorated for Christmas

ভ্রমন মানচিত্রে ব্যান্ডেলের আকর্ষনীয়তা আজ তুঙ্গে। পর্তুগিজশব্দ বন্দর থেকেই কালক্রমে জায়গার নাম হয়েছে ব্যান্ডেল। ১৫৩৭ সালে নবাবকে সাহায্যের বিনিময়ে কারখানা গড়ার অনুমতি পায় পর্তুগিজ অ্যাডমিরাল সাম্পাইও। ব্যান্ডেলকে ঘিরে গড়ে ওঠে ফ্যাক্টরির সঙ্গে পর্তুগিজ কলোনিও। তাদেরই তৈরী চার্চ ও মনাস্ট্রি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ১৫৭৯ সালে হুগলী নদীর তিরে বন্দরের পত্তন করে পর্তুগিজরা। আর ১৫৯৯ সালে তৈরী হওয়া মূল চার্চটি ১৬৩২ সালে দীর্ঘ অবরোধের পর শাহজাহানের হাতে রয়্যাল বন্দরটি গড়ে ওঠে। পরের বছর পর্তুগিজরা আবারও ফিরে আসে।

১৬৪০ সালে নতুন করে চার্চ গঠন হয়। বাংলার মাটিতে সুন্দর কারুকার্যমন্ডিত ব্যান্ডেলের চার্চটিই প্রাচীনতম চার্চ। এর সম্মুখভাগ গ্রিসের ডোরিক স্থাপত্যে গড়া। চার্চটির আসল নাম নোস্যা সেনহোরা ডি রোজারিওর নামে হলেও সাধারন মানুষ একে ব্যান্ডেল চার্চ নামেই চেনে। রোজারিওর মূর্তি কাঁচের তৈরী। দরজার উপর জাহাজের একটি ছোট্ট মডেল। চার্চের পূর্বদিকে মাতা মেরীর আবির্ভাব স্থলে লুডের রেপ্লিকার রূপে গুহা তৈরী করা হয়েছে। ইশ্বরের প্রাসাদ ভূষণ পেয়ে মর্যাদা বেড়েছে চার্চের। অতীতের বিশাল ঘন্টাটি আজ আর দেখতে পাওয়া যায় না।

১৯৪৯ সালের ২৮ অক্টোবর চার্চের ৩৫০ বছর পূর্তিতে গঙ্গার ধারে ক্রস মেমোরিয়াল অলটার তৈরী করা হয়েছে। সারাবছরই চার্চে লেগে থাকে উৎসব। এছাড়াও নভেম্বর মাসে কুমারী মারিয়ার জপমালা, মে মাসে মাতা মারিয়ার শুভ যাত্রা উৎসব বিশেষ উল্লেখ্য। সম্প্রতি স্কুল বসেছে একটি অংশে। তেমনই ব্যান্ডেল রেল স্টেশনের কাছে এনএইচ২ লাগোয়া রাজঘাট গ্রামের আম ও বাঁশ বাগানে চেনা-অচেনা পাখির কোলাহল ও শতাধিক ময়ূরের পেখম তোলা নাচ সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

কীভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল বা বর্ধমান লোকালে চেপে ব্যান্ডেল স্টেশন। হাওড়া থেকে ভোর ৪টে ১৫ থেকে শুরু করে ১১টা ৪৫ অবধি ট্রেন আছে। আর ব্যান্ডেল থেকে ফেরার শেষ ট্রেন ১১টা ১১ মিনিটে। ৩০ মিনিট অন্তর ট্রেন পাওয়া যায়। হাওড়া থেকে ১ ঘন্টার পথ, মাত্র ৪০ কিলোমিটার পথ। এছাড়াও হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল যাওয়ার প্রচুর বাস মেলে।

কোথায় থাকবেন?

এখানে থাকার দরকার হয় না। আর কোনও হোটেলও নেই ব্যান্ডেলে। ভালো হবে চন্দননগরে রাত কাটিয়ে দুদিনে ভাগিরথী পেরিয়ে কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার জুড়ে ১৮ শতকে বিশ্বের ৪টি বিশেষ জায়গা কলকাতা-হুগলিতে ইংরেজ, চন্দননগর-শ্রীরামপুরে ফ্রেঞ্চ ড্যানিশ, চুঁচুড়া-ব্যান্ডেলে ড্যানিশ ও পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক ইতিহাস রোমন্থন করে নেওয়া উচিত হবে। ব্যান্ডেলে পৌঁছে রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন হংসেশ্বরী, বাসুদেব মন্দির, ব্যান্ডেল চার্চ, ইমামবাড়া, শরৎ তীর্থ দেবানন্দপুরের উদ্দেশ্যে। দিনের শেষে ফিরে আসুন কলকাতায়। পারলে প্যাকেট লাঞ্চ নিয়ে ইমামবাড়ায় ঘাসের উপরে বসে পিকনিকও সেরে নিতে পারেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*