অস্তিত্বের সঙ্কটে উলুবেড়িয়ার শাটলকক

শাটলকক তৈরীতে হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া নামটি অতি পরিচিত। একসময়ে সারা দেশে এই কর্কের চাহিদার প্রায় সিংহভাগই মেটাতো উলুবেড়িয়া। জানা যায় বিখ্যাত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকনের প্র্যাকটিস ও তাঁদের ব্যবসার জন্য যে বিপুল পরিমান শাটলকক লাগতো তার সবটাই সাপ্লাই হতো হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার বানিবন, যদুরবেড়িয়া, নিমদিঘি, বাণীতবলা এলাকা থেকে।

দশবছর আগে এখানে ২০০ টির ও বেশি শাটলককের কারখানা ছিল। উলুবেড়িয়ায় এই শিল্পের উপর ভিত্তি করেই প্রায় হাজার হাজর মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন।

এখানে এই শিল্প গড়ে ওঠার এক সুন্দর ইতিহাস আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজ সেনারা উলুবেড়িয়ার এক হাসপাতাল মাঠে তাঁবু ফেলে। এবং সেখানে এই ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করেন। একদিন এক ব্যবসায়ীর নজরে আসায় তিনি গিয়ে প্রস্তাব দেন তাঁদের খেলার এই ছোট্ট সামগ্রীটি তাঁরা তৈরী করে দেবেন। তখন কক বলতে ঐ বোতলের ছিপির পিছনে হাঁসের পালক গুজে দেওয়া, আর সেটাই পছন্দ হয়ে যায় ইংরেজ সেনাদের। তারপর থেকেই রমরমিয়ে চলে এই ব্যবসা কালক্রমে তা এই এলাকার এক বিশাল শিল্পে পরিণত হয়।

এই কর্ক তৈরী করতে লাগে একটি থার্মোকলের বল আর তার উপর ফুটো করে লাগানো হয় হাঁসের পালক। খসে যাওয়া হাঁসের পালক সংগ্রহ করে আনে ফেরীওয়ালারা, তারপর তা আসে কারখানায়। সেই থেকে তৈরী হয় এই শাটলকক।

তবে বর্তমানে ভাঁটা পড়েছে উলুবেড়িয়া এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পে। একসময় যেখানকার শাটলককের বিখ্যাত খেলোয়াড়দের ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি দিত এখন তা অস্তিত্বের সঙ্কটেই ভুগছে। পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব ও পালকের উপর অত্যাধিক কর চাপানোয় ব্যবসা চালানোয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায়। ব্যবসায়ীরা বলেন, আসলে একটা ভালো মানের কর্কের বাজার দর যা- সে তুলনায় কম খরচে বাজারে ছেয়ে গেছে প্লাস্টিক চিনা কর্ক। ফলে লোকাল বাজারে ক্রমে প্রয়োজন হারাচ্ছে পালকের কর্ক। আর তার ফলে আস্তে আস্তে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে আমাদের এই ব্যবসা। এই শিল্পকে বাঁচাতে উন্নত বিপণন কৌশল এবং প্রযুক্তি কীভাবে প্রয়োগ করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দরকার। বিগত কয়েক বছর এই শিল্পে নেমে এসেছে ব্যাপক মন্দা। তাঁরা আরোও বলেন বর্তমান সরকার এখন প্রতিটি শিল্পের জন্যই বহুকিছু করছেন। হয়তো আমাদের দিকেও নজর দেবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*