রং বেরং

মৌ দাশগুপ্তঃ

নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে।বিজয়ী প্রার্থীর বিজয়মিছিল বেরিয়েছে। মিছিলের সবাই দলের প্রতীকি রং নিয়ে হুল্লোড়ে মেতেছে।আজ আর দলমত কোনকোন বাছ বিচার নেই, স্ত্রী পুরুষ বাচ্চা বুড়ো পথ চলতি সবাইকে আবির ছুঁড়ছে ওরা। আবির উড়ছে হাওয়ার।রাস্তার কালো পিচ, গাছের সবুজ পাতা, সবজেটে ঘাস ,ঘোষদাদুর বাড়ির লাল সিমেন্ট বাঁধানো রোয়াক, সব আজ একটা নির্দিষ্ট রংয়ের আবিরে রঙিন। পিচ্চুদের পোষা নেড়ীকুকুর পোকেমন কি বিধবা মনিপিসির ফাঁকা সিঁথি কেউ রঙ থেকে ছাড় পায়নি। দু চোখে ঘেণ্ণা আর বিতৃষ্ণা নিয়ে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিল রাস্তায় উদ্দাম মিছিলটা দেখছিল কারুবাকি। মিছিলের সবাই আবির মেখে ভুত। তবু চোখাচোখি হতেই থমকে দাঁড়ানো সুতীর্থকে চিনতে ভুল হবার কথা তো নয়। গত দোলের দিনই আমবাগানের এককোনে টেনে নিয়ে ওই তো লাল আবিরে রাঙিয়ে দিয়ে চুমু খেয়ে বলেছিল

–    সিঁথিতে লাল রঙে ভারি মিষ্টি লাগে তো তোকে। আজ আবির দিলাম, দেখবি কাল সিঁদুরটাও আমিই তোকে পরাবো।

মাত্র মাসখানেক কেটেছে তবু মনে হয় যেন কবেকার কথা। ভোটের আগেরদিন ওই তো এসেছিল এ বাড়ীতে, সঙ্গে একপাল শিয়াল কুকুরের মত হিংস্রমুখের মানুষ।জানলার কাঁচগুলো থানইঁটের আঘাতে ঝনঝন করে ভেঙে পড়েছিল, লাথির পর লাথি খেয়ে সদর দরজাটার একটা পাল্লা জবাব দিতেই ঘরে ঢুকে এসেছিল ওরা। ভীত সন্ত্রস্ত কারুবাকি, ওর বৌদি সমন্বিতা আর দেড় বছরের ভাইঝি কনকাঞ্জলিকে বাতে শয্যাশায়ী মার ঘরে ধাক্কা মেরে ঢুকিয়ে শিকল টেনে দিয়েছিল ওর দাদা কিরীটি। তারপর ওদের চোখের সামনেই লোকগুলো টেনে হিঁচড়ে বার করে নিয়ে গিয়েছিল কারুবাকির ছোটভাই কিঙ্করকে। ভাইকে বাঁচাতে চীৎকার করতে করতে ওদের পেছন পেছন ছুটে গেছিল কিরীটি। তারপরের কথা আর মনে রতে চায়না কারুবাকি। সমবয়সী বৌদির সাদা সিঁথির দিকে তাকিয়ে নিজের সিঁদুর পরার সাধ ঘুচে গেছে ওর। এখন ও জানে সিঁদুর আর আবিরই শুধু লাল হয়না। রক্তের রংও লালই হয়। গাঢ় টকটকে লাল। খালি ও ভেবে পাচ্ছে না  রঙিন আবিরের স্পর্শ আর মাঙ্গলিক সিঁদুরের আলতো ছোঁয়া দিয়ে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা ছিল তা শুধু ভিন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাসী হবার কারণে লাল রক্তে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল কেন?

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*