জয় বাংলা দিচ্ছে ডাক, জয় ভারত বেঁচে থাক

পিয়ালি

করোনা পরিস্থিতিতে দুবছর ভার্চুয়াল হওয়ার পর ধর্মতলায় শহিদ স্মরণে মহা জনসমাবেশ। ২১-এর জয়ের পর একুশে জুলাই উদযাপন। বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বক্তব্য রাখা শুরু করেন তখন ঝমঝম করে পড়ছে বৃষ্টি। মমতা বললেন, মানুষের বৃষ্টি বিজেপিকে ২৪ সালে ভারতবর্ষ থেকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। একুশে জুলাই মানে তৃণমূল সর্ব স্তরের নেতা কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বার্তা দেন তা শুনতে আসেন। এদিন পুরো বক্তব্য জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেন। বিজেপির উদ্দেশে বলেন, ওদের মেরুদন্ড বাঁকা, আমাদের মেরুদন্ড সোজা। ওদের মেরুদন্ড ইডি-সিবিআই। বাংলায় ওরা আমাদের হারানোর চেষ্টা করেছিল, পারে নি।

“একুশ” এক আবেগের নাম। তাই তো বলি আবার একবার/একুশ আসুক বারবার। এরপর মানুষের কল্যাণে যেসব প্রকল্পগুলি তিনি করেছেন তার খতিয়ান দেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মী ভান্ডার একের পর এক প্রকল্পের নাম উল্লেখ করেন। মমতা বলেন, একদিকে কৃষি, অন্যদিকে শিল্প এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।

কেন্দ্রীয় রিপোর্টে কৃষকদের ইনকামের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম। বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব আমরা কমাতে পেরেছি। দেউচা পাঁচামিতে আমরা জোর করে কিছু করবো না কিন্তু ওখানে ১ লক্ষ লোকের চাকরি হবে। সিলিকন ভ্যালিতে ৫০ হাজার লোক কাজ পাবেন। আমরা বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারব। শিক্ষকতায় ১৭ হাজার পোস্ট রেডি আছে। কিন্তু কোর্টে কেস চলছে বলে রিক্রুট করা যাচ্ছে না। ওদের রেলওয়ে, ইউপিএইচসি, কোল ইন্ডিয়া, ডিফেন্স, সিভিলাইজেশন সেখানে সব কি হচ্ছে? সব জায়গায় গদ্দারদের ছেলেমেয়েদেরই চাকরি দিতে হবে তার কোনও মানে আছে? মমতা বলেন, কে কোন দল করে চাকরির ক্ষেত্রে আমি সেগুলো দেখি না। ভুলভ্রান্তি হলে সংশোধন করে শুধরে নেব। যে কাজ করে না সে ভুলও করে না।

আবারও বিজেপির দিকেই আঙুল তুলে তিনি বলেন মুড়িতেও জি এস টি লাগাচ্ছে। এই সময় তিনি সভার একজনের কাছ থেকে মুড়ি চান। সোজাসুজি সেই মুড়ি ট্রেতে ঠেলে বলেন, লোকে কি খাবে? স্লোগান দেন, “আমাদের মুড়ি, আমাদের জিনিস ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও।”

গ্যাসের দাম, পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ায় উষ্মাপ্রকাশ করেন তিনি। বলেন, কি সুন্দর সরকারের আমলে আমরা বাস করছি। দরিদ্র মানুষের সবকিছু চুরি করে নিয়েছে। বিত্তবান নয় বিবেকবান হওয়া দরকার। কত টাকা কামাবে? একটার পর একটা সরকারকে ভাঙছে। বম্বে ভাঙলো, হরিয়ানা, ছত্তিশগড় ভাঙবে। বলছে আবার বাংলাও ভাঙবে। বাংলা ভাঙ্গা অত সহজ নয়। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে বাংলায়। এরপরই দলনেত্রী বলেন, পাহাড়েও এখন আমরা অনিত থাপার সঙ্গে লড়ে জিতেছি। ২০২১-এ আপনারা যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন তাকে আভিনন্দন, সালাম।

বাংলার মানুষ মাথানত করতে জানে না, মাথা উঁচু করে চলে। ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলা আবাস যোজনা বন্ধ, গ্রামীণ রাস্তা প্রকল্পেও টাকা দেওয়া বন্ধ। পলিটিক্সে কেউ জেতে, হারে। তাই বলে হেরে গিয়ে খাবার দেবে না? বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর পাশাপাশি দলীয় কর্মীদেরও সৎ থাকার পরামর্শ দেন দলনেত্রী। বলেন, দলের নাম বা ২১ জুলাইয়ের নাম করে কেউ টাকা তুললে তাকে সোজাসুজি থানায় ধরিয়ে দিন। এমএলএ, এমপি, জনপ্রতিনিধিরা যাতে পা মাটিতে রেখে চলেন তার জন্যও পরামর্শ দেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। মমতা বলেন আমি দেখতে চাই সাইকেলে চেপে, পায়ে হেঁটে বা রিক্সায় চেপে বিধায়ক যাচ্ছেন। কোনও চায়ের দোকানে গিয়ে চা খেলে পয়সা দিয়ে খাবেন। গরীব চা দোকানির পয়সায় চা খাবেন না।

এরপর মমতা বলেন, মনে রাখবেন নেত্রীর থেকেও দল বড়। বিজেপি সরকার ‘বিড়াল তপস্বী’র সরকার। ইডি, সিবিআই, আইটি দেখলে ভয় পাবেন না। থালায় করে মুড়ি খেতে দেবেন। আমারা মা লক্ষ্মীরা কোথায়? ছাত্র যৌবন কোথায়? হাত তুলে দেখান। আবার বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, আগামীদিনে দিল্লি দখল করবে কারা? চ্যালেঞ্জ করে বলছি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বিজেপি। জীবন দিয়ে লড়বো।

এদিন তাঁর বক্তব্যের মাঝেই বৃষ্টি থেমে যায়। মমতা বলেন দেখলেন তো কেমন বৃষ্টি থেমে গেলো! এটাই রীতি। একুশের শহিদ তর্পণে বৃষ্টি হয়, আবার থেমেও যায়। মমতা আরও বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব হলো জনগণকে পাহাড়া দেওয়া। কেউ দুর্নীতি করলে নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে থানায় ধরে নিয়ে যাবেন। আগামীদিন তৈরি হতে হবে। ডিটারমিনেশন, ডেডিকেশন, ডিসিপ্লিন এই তিনটি ‘ডি’ মাথায় রেখে চলবেন। ওরা অহংকারী হোক, আমরা মানবিক হবো। আমি চাই ভারতবর্ষে একটাই আদর্শ রাজনৈতিক দল থাকুক, যার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। কবিকে উদ্ধৃত করে বলেন, আমি ভয় করবো না, ভয় করবো না। স্লোগান দেন, ভাঙো ২৪-এ বিজেপির কারাগার ভাঙো/ মানুষের সরকার আনো।

এরপর দলনেত্রী আসাম, মণিপুর, গোয়া, ত্রিপুরা সর্বত্রই বিজেপিকে হারানো এবং নিজেদের সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর কথা বলেন। মমতা বলেন, “জয় বাংলা, জয় ভারত”। একুশ মানে দর্শন, জনগণের ভাষা; ২৪-এ বিজেপিকে হারানোর দিশা। ২৪-এ মানুষের সরকার আনুন। নিজের হাতের পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়ে নেত্রী বলেন, একটা হিন্দু, একটা মুসলিম, একটা জৈন, একটা খ্রিস্টান, একটা পারসিক। বিজেপি হঠাও, সিপিএম হঠাও দেশ বাঁচাও। তৃণমূল জনগণের পাহারাদার। এরপরই নেত্রী স্লোগান দেন জয় বাংলা দিচ্ছে ডাক, জয় ভারত বেঁচে থাক।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*