বাংলা কীভাবে বদলে গেছে এসে দেখুন : মমতা ব্যানার্জি

পিয়ালি আচার্য, মুম্বাই : তিন দিনের মুম্বাই সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বাণিজ্যনগরীতে বাণিজ্যের সন্ধানে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ছিল মুম্বাইয়ের তাজমহল প্যালেস হোটেলে। রুদ্ধদ্বার বৈঠক। ১ নভেম্বর ২০১৭ ওয়াইপিও-দের বৈঠকের আমন্ত্রণপত্রই বলে দেয়, সারা দেশে তিনি কতটা জনপ্রিয়। ১৯৯২ সালের ব্রিগেড সম্মেলনের ছবি দিয়ে এই আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে, A leader fearless and courageous. তাঁর লড়াকু, নির্ভয় মনোভাবের কথাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি যে একজন সহানুভূতিশীল, অনাড়ম্বর, আত্মসংযমী সে কথাও লেখা আছে আমন্ত্রণপত্রে। তাঁর চরিত্রের সরল অথচ কঠিন মনোভাবের কথা বার বার আলোচিত হচ্ছিল উপস্থিত বড়ো বড়ো শিল্পপতিদের মুখে। এই আমন্ত্রণপত্রে তাঁকে সম্বোধন করা হয়েছে ‘দিদি’ বলে। বিশিষ্ট শিল্পপতি সজ্জন জিন্দালের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করার কথা ছিল। বৈঠকে সজ্জন জিন্দাল এবং মুখ্যমন্ত্রী দু-জনে প্রধান ভূমিকা নিলেও ছিলেন আরও অনেক নবীন-প্রবীণ উদ্যোগপতি। তাজ হোটেলের বলরুমে হওয়া এই বৈঠকে ঢোকার মুখে গেলে আপনি অবাক হবেন। মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বিভিন্ন বইয়ের কাট আউট দিয়ে কোলাজ তৈরি করা হয়েছে। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি ভিআইপি নয়, এলআইপি অর্থাৎ লিস্ট ইমপর্টট্যান্ট পার্সন। আমার চেয়ারের কোনও মোহ নেই। শিল্পপতিদের তিনি বলেন, বাংলা কীভাবে বদলে গেছে বাংলায় এসে দেখুন। আমি বলবো না। আপনারাই এসে দেখতে পাবেন। যতটুকু করতে পারবো তাই-ই বলবো। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আমি দিই না।

১ নভেম্বর প্রথম বৈঠকটি ছিল সন্ধে সাড়ে ছ-টায় তাজমহল প্যালেস হোটেলে ব্যাঙ্কারসদের সঙ্গে। ছিলেন স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান উদয় কোটাক। এ ছাড়াও ছিলেন বিশ্ববীর আহুজা, রাসেস শাহ, নীরঞ্জন হীরানন্দানি প্রমুখ। এই বৈঠকেও ছিলেন সজ্জন জিন্দাল, আদি গোদরেজ প্রমুখ বিশিষ্ট শিল্পপতি। সজ্জন জিন্দাল আবার তাঁদের সিমেন্ট কারখানা করার কথা বলেন। নীরঞ্জন হীরানন্দানি সাগরে চলতি তাঁদের যে গ্যাস প্রজেক্ট সেটি ২০১৮ সালের মে মাসেরই শেষ হবে বলে জানান। দুটি বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতি এবং ব্যাঙ্কারসদের বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে আমন্ত্রণ জানান। বলেন, আসুন বাংলায়। সরকার আছে আপনাদের পাশে। এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ হয়েছে, কিন্তু আরও চাই। ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট বেড়েছে। ঋণজর্জরিত একটা রাজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও আপনারা আরও বিনিয়োগ করুন। বাংলায় পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। আপনারা আসুন।

দ্বিতীয় বৈঠকে বা ওয়াইপিওদের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ল্যান্ড ব্যাঙ্ক করেছি, ল্যান্ড ম্যাপ করেছি, ল্যান্ড ইউজ পলিসি করেছি। আমাদের সময়ে কোনও ম্যানডেজ বা শ্রমদিবস নষ্ট হয়নি। শিল্পের অনুকূল পরিবেশ এখানে আছে। পরিকাঠামো উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। স্থায়ী সরকার রয়েছে। এখানে জমিরও অভাব নেই। আমাদের ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে আপনারা জমি নিতে পারেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মহারাষ্ট্রকেও ভালোবাসি, পাঞ্জাবকেও ভালোবাসি। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আমি সারা দেশের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প করেছি। কোনও বৈষম্য করিনি। ছুঁয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার কথা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো যে বহু ক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হচ্ছে  বিষয়টিও তাঁর বক্তব্যে বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এর আগে ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মুম্বাই পৌঁছোন মুখ্যমন্ত্রী। বিজনেস ক্যাপিটালে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিজনেস ম্যাগনেট মুকেশ আম্বানির সঙ্গে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের আলটা মাউন্ট রোডের কুম্বালা হিলের অ্যান্টিলিয়ায় বৈঠক করেন। রাত ৮টা ৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক হয় মুকেশ আম্বানির সঙ্গে। বলা হয়, বাকিংহাম প্যালেসর পর ব্যক্তিগত মালিকাধীন সবচেয়ে বিলাসবহুল দামি অ্যান্টিলিয়া। এই অ্যান্টিলিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়ি কি না সেই বিতর্কে না গিয়েও বলা ভালো গৃহকর্তা মুকেশ আম্বানি তাঁর বহু ব্যস্ততা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে করলেন দীর্ঘ বৈঠক। ১ নভেম্বর নীতা আন্বানির জন্মদিন। নীতা আম্বানি আগেই জন্মদিনের উৎসবে যোগ দিতে বিদেশ যাত্রা করেছিলেন। তাঁর স্বামী মুকেশ আম্বানি বিদেশযাত্রা পিছিয়ে মুম্বইতে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা করার জন্য। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মুকেশ আম্বানি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তাই তিনি দেখা করতে এসেছেন, এটা একটা সৌজন্য সাক্ষাৎকার। আগামী বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটেও মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ আম্বানিকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মুকেশ আগেও এসেছিলেন, এবারও আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মুকেশ আম্বানি এর আগেও বাংলায় বিনিয়োগ করেছেন আবারও করবেন। এটা বাংলার পক্ষে ভালো। সূত্রের খবর, মুকেশ বাংলায় ডেটাবেস হাব করতে চেয়েছেন। এই বিনিয়োগ এলে রাজ্যে ১ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হবে। মুখ্যমন্ত্রী জমি দিতেও প্রস্তুত বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আরেকটি সূত্রের খবর, আইএসএলের ফাইনাল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে করার জন্য মুকেশ আম্বানিকে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুকেশ বলেন, বিষয়টি তাঁর মাথায় আছে, ভালোই হবে। মেরিন ড্রাইভে ট্রাইডেন্ট হোটেলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১ নভেম্বর সকালে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলী দেওয়ার ছেলে মিলিন্দ দেওরা দেখা করেন। এই তরুণ কংগ্রেস নেতা বলেন, আমার বাবার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। এটা সৌজন্য সাক্ষাৎকার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*