অনুগল্পঃ অশ্রু

রাজিত বন্দোপাধ্যায়:

ছোটু মাহাতোর চোখের সামনে থেকে চিতার ধোঁয়া এখনও সরেনি । কানে ভেসে আসছে দাওয়ার এক কোনে দাঁড়ানো বৌদির চিল চিৎকার
— উয়ায় ডাইন আছে , আমার ছালারে খাইলো । ইখন আমার পেটটার দিকে লজর দিইছে ।
জৈষ্ঠের কাঠফাটা রোদের উজ্জ্বল আলোয় প্রতিবাদ বুড়ি মায়ের ঘরের দিকে যাবার চেষ্টা করতেই দাদা বিরজা মাহাতোর হাড়িয়া ঠেকের দোস্তরা এসে তাকে ধরে ফেলে খুটায় পিছা মোড়া করে বেঁধে ফেলল ।
বুড়ি মা তখনও তার দাওয়ায় কাঁপা গলায় বোঝাতে চেষ্টা করে চলেছে ,
— আমি কিছু নাই করি বাপ , আমি ডাইন লই বাপ …
পনেরো বছরের ছোটু মাহাতো সেই সকাল থেকে বোঝানোর চেষ্টা করে আসছে ,
— বুতরুরে রোগে ধরেছিল । বিশ্বাস কর তোরা । নার্স দিদি কইছিল , উয়ার নাকি চমকি হইল।হাসপাাতালে লিয়ে যাতি হবে । তোরা নাই শুনলি । ওঝা ডাকাইলি । উয়ায় বইললে ডাইন লাগিছে । আর তোরা উয়ায় মাইনলি !
যখন সম্বিত ফিরল ছোটু মাহাতোর ততক্ষণে চৌকি থেকে পুলিশ এসে পড়েছে । ভাগ্যিস সাহস জুটিয়ে ছুটে এসে উপ মুখিয়া কেবলু মাহাতো বিরজার হাত থেকে কুড়লটা কেড়ে নিয়েছিল ; নইলে ছোটু মাহাতোরও মাথা টা ঘাড় থেকে নেমে তার মায়ের পাশে পড়ে থাকতো এতক্ষণে । ছোটু মাহাতোর হাত এসে খুলে দিল এক সিপাহী । সে সেখানেই লুটিয়ে বসে পড়ল ।
চোখে ধোঁয়ার জ্বালা অনুভব করছে ডাক্তার ছোটুরাম মাহাতো । সামনের দিকে চেয়ে দেখল হল ঘরের মেঝেতে সার সার বসে আছে নতুন আসা সিস্টাররা । এতদিন পরে আজ পঞ্চাশ শব্দও ব্যবহার করতে হয়নি চমকি কী তার ব্যাখ্যা করতে । ডাক্তারি ভাষায় একে বলে সিরিয়াস ভাইরাল ইনফেকশন — মানে গম্ভীর জীবাণু সংক্রমণ । থামল সে ।
নিস্তেজ হল ঘর টা আজ ছোটু মাহাতোর চোখে হঠাৎই আবছা হয়ে আসে । আচমকা নিজের হাতের উপর একফোঁটা গরম কিছু পড়ল ! ছোটু মাহাতো হাত সামনে না এনেই বুঝল তার জ্বালা ধরা আবিল চোখটা আসলে ভরে উঠেছে অশ্রুতে ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*