নট রিচেবল

অংশু প্রতিম দেঃ

এক বছর আগের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়

খবরে বলছে, গাঙ্গেয় উপকূলে মৌসুমিবায়ুর আবির্ভাব ঘটেছে। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হয়নি। খড়দায় বেশ রোদ ছিল সকালে। সৌম্য বাড়ী থেকে বেরনোর সময় আর ছাতা নিল না। তবে ব্যারাকপুর লোকালে চেপে দমদমে পৌঁছতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বেসরকারি চাকুরে সৌম্যকে দমদম থেকে মেট্রো করে নেতাজিভবন যেতে হয়। ভবানীপুরে যদুবাবুর বাজারের উল্টোদিকের একটা গলিতে সৌম্যর অফিস। বৃষ্টির জন্য সেদিন নেতাজিভবন মেট্রোর শেডের নীচে দাঁড়াতে হয়েছিল সৌম্যকে। গাঢ় নীল সালওয়ার কামিজে ছাতা মাথায় মেঘনা সৌম্যদের অফিসের গলিতে ঢুকছিল। সৌম্যর মেঘনাকে সেই প্রথম দেখা। বৃষ্টি একটু ধরলে অফিসে পৌঁছে আর্কিটেক্ট রুমে মেঘনাকে বসে থাকতে দেখে সৌম্য বুঝে গিয়েছিল, এই ওদের নতুন আর্কিটেক্ট। কাজের এক ফাঁকে সৌম্য সেদিনই মেঘনার সাথে পরিচয় করে নিয়েছিল।

…ক্রমে ক্রমে আলাপ যখন উঠলো জমে

প্রথম দিনের সেই আলাপের পর ধীরে ধীরে সৌম্য চেষ্টা করেছে কিভাবে মেঘনার কাছে আসা যায়। বেশ মিশুকে মেয়ে মেঘনা, তাই অফিস কলিগ থেকে বন্ধু হয়ে যেতে সৌম্যর বেশী সময় লাগেনি। সৌম্য যদিও শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্কেই থেমে থাকতে চাইছিল না। পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি হাইট, মেদহীন টানটান শরীর, পাকা গমের মত গায়ের রঙ, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, দু গালের টোল, মেঘনার উপস্থিতি সৌম্যর মনে ঘোর লাগিয়ে দিয়েছিল। অফিসের বাইরেও মেঘনার সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে হত সৌম্যর। খড়দার ছেলে সৌম্য আর মেঘনার বাড়ি কসবায়। দুজনের রাস্তা আলাদা হলেও অফিস ছুটির পরে ভবানীপুর থেকে রাসবিহারী মোড় অব্ধি কখনো কখনো হেঁটে চলে যেত সৌম্য আর মেঘনা। সেখান থেকে কসবার বাসে মেঘনাকে তুলে দিয়ে কালিঘাট মেট্রো স্টেশনে দমদমের ট্রেন ধরত সৌম্য। আর মনের ভেতরে কসবার আশে পাশে ফ্ল্যাট কিনে খড়দা থেকে কলকাতায় চলে আসার চিন্তাটা ঘুরপাক খেত।

জয়েন করার পর এক মাস যেতে না যেতেই মেঘনা অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েকদিন অফিসে আসছিল না। সেইসময় একদিন অফিসের পরে মেঘনাকে দেখতে সৌম্য চলে গিয়েছিল ওদের বাড়িতে। সারাদিন ধরে প্রচণ্ড বৃষ্টির জন্য সেদিন বাস সার্ভিস খুব ইরেগুলার ছিল। যদুবাবুর বাজারের সামনে বাস পেলেও রাসবিহারী মোড়, গড়িয়াহাট হয়ে বিজন সেতু পেরিয়ে যখন বাস থেকে নামল সৌম্য, রাত প্রায় সাড়ে আটটা। অঝোরে বৃষ্টি হয়ে চলেছে! অটো, রিক্সা কিছুই নেই রাস্তায়। তবে কিছু একটা যেন ভর করেছিল সৌম্যর ওপরে। কসবা রুবিপার্কে মেঘনাদের ফ্ল্যাটে হেঁটেই পৌঁছে গিয়েছিল। ছাতা থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টির উল্টোপাল্টা ছাঁটে মাথা বাদে শরীরের অন্যান্য জায়গা বেশ ভিজে গিয়েছিল। কয়েক জায়গায় হাঁটু জল পেরতে গিয়ে জুতো মোজাও ভিজে একসা। তবে মেঘনার শুকনো মুখের অবাক হাসিতে সৌম্য নিজের সব দুর্দশার কথা ভুলে গিয়েছিল। কিচ্ছু না জানিয়ে মাত্র একমাসের পরিচয়ের সূত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে এইভাবে সহকর্মীর বাড়িতে চলে আসা মেঘনা কিভাবে নেবে তা নিয়ে মনের ভেতরে বয়ে চলা টেনশনের চোরা স্রোত উধাও হয়ে গিয়েছিল নিমেষে। সৌম্যকে কে দেখে মেঘনা যে খুব খুশী হয়েছিল সেটা সৌম্যর থেকে ভাল আর কে জানে!

আসলে সৌম্য একটা বার্তা দিতে চেয়েছিল সেদিন। সৌম্য এরপরও বিভিন্ন সময় নানাভাবে মেঘনাকে বোঝাতে চেয়েছে ওর দুর্বলতার কথাটা। সরাসরি প্রপোজ করতে পারেনি, ভয়ে। অত সুন্দরী মেয়ে, যদি না বলে দেয়। অফিসেও ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যেতে পারে! সেক্ষেত্রে খুবই অস্বস্তিকর একটা পরিস্থিতি তৈরী হবে। সিনিয়ার ইঞ্জিনীয়ার হিসেবে সৌম্যর এই কোম্পানিতে একটা প্রেস্টিজ আছে। কিছুদিন মেলামেশার পর মেঘনার প্রেমে টালমাটাল সৌম্যর মনে হতে লাগল, মেঘনাও ওকে বেশ পছন্দ করে। দুর্গাপূজোর সময় কসবা শীতলা মন্দিরের পুজো দেখতে এসে মেঘনার সাথে দেখা করেছিল সৌম্য। নবমী ছিল সেদিন। কসবার আশেপাশে নানা পূজোমন্ডপে বিকেল থেকে রাত অব্ধি অনেকটা সময় সৌম্য মেঘনার সাথে কাটিয়েছিল। তবুও, শাড়ীতে একটু অপরিচিতা, একটু রহস্যময়ী মেঘনাকে বলি বলি করেও মনের কথাটা বলতে পারেনি সৌম্য।

দূরত্বের ফাঁকফোকরে তৃতীয় ব্যক্তির উঁকিঝুঁকি

পূজোর পর পরই সৌম্য অফিসে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রানিগঞ্জে ওদের একটা সাইটে কাজ শুরু হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল। সাইট ইন চার্জ হিসেবে ওখানে যেতে হবে, তাই সেই কাজের ব্যাপারে সৌম্যকে আগের থেকে অনেক বেশী সময় অফিসে দিতে হত। এইসময় নতুন কাজের জন্য কিছু ছেলে মেয়ে রিক্রুট করা হল কোম্পানিতে। তার মধ্যেই একজন দেবাশিষ বসু, জুনিয়র আর্কিটেক্ট। লম্বা, হ্যান্ডসাম ছেলেটার সাথে মেঘনা ক্রমশঃ ঘনিষ্ঠ হচ্ছিল! একই রুটের বলে ওরা একসাথে অফিসে যাতায়াত করত। ব্যাপারটা অফিসের আর পাঁচজনের মত সৌম্যর নজরে এলেও ও এটা নিয়ে একদমই মাথা ঘামায়নি। মেঘনার সাথে ওর সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ত আর নষ্ট হয়ে যায়নি। জানুয়ারির শেষের দিকে সৌম্য রানিগঞ্জে চলে এলেও মেঘনার সাথে রেগুলার যোগাযোগ রেখেছে। প্রায় প্রতিদিনই কথা হয়। এই সেদিনও ফোনে কথা বলার সময় মেঘনা জানালো, রানীগঞ্জের প্রোজেক্ট নিয়ে অফিসে সৌম্যর খুব নাম হয়েছে। হবে নাই বা কেন! বেশ সাফল্যের সাথে কাজ করছে সৌম্য। প্রোজেক্টটা বলতে গেলে একাই সামলাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রোজেক্ট কমপ্লিট করে কলকাতায় ফেরার ইচ্ছে সৌম্যর। এর ফলস্বরূপ প্রোমোশন ত পাবেই, আনুষঙ্গিক ইনক্রিমেন্টও জুটবে! তারপর সফল পুরুষকারের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে সৌম্য মেঘনার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে প্রপোজ করবে! জুনিয়র আর্কিটেক্ট দেবাশিষ সেসময় ধোপে টিকবে না!

বর্তমান সময়, সকালবেলা

কল্যান রায়! ওদের অফিসের আর্কিটেক্ট ডিপার্টমেন্টের হেড! ওনারই নির্দেশে আজ সকালের ব্ল্যাক ডায়মন্ড ধরে রানিগঞ্জে এসেছে দেবাশিষ। উদ্দেশ্য হল, সাইটে এক্সটার্নারনাল ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু হওয়ার আগে লে আউট চেক করে দেখে নেওয়া। আসার টিকিটটা অফিস থেকেই রিজার্ভ করে দিয়েছিল। একদিনে কাজটা শেষ হবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত ছিল না বলে দেবাশিষ ফেরার টিকিটটা আর করায়নি। রানিগঞ্জ স্টেশনে সৌম্যদাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আশ্বস্ত হল দেবাশিষ। শর্ট হাইট, ছিপছিপে চেহারাতে মধ্যপ্রদেশটি বেমামান ভাবে স্ফীত, গায়ের রঙ মাঝারি ছিল, রাণিগঞ্জে থাকার জন্য কিনা বোঝা গেল না, আরও পুড়ে গেছে যেন! অত্যন্ত সাধারণ দেখতে সৌম্যদার পক্ষে মেঘনার রূপে লাট্টু হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। জলখাবার খাইয়ে সৌম্যদাই দেবাশিষকে সাইটে নিয়ে গেল।

খেপে খেপে তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও সারাদিনে কাজটা শেষ করে ফেলতে দেবাশিষের অসুবিধা হল না। সৌম্যদাও খুব সহযোগিতা করেছে। আজ সারাটা দিন একসাথে কাটিয়ে দেবাশিষের বেশ ভালো লেগেছে মানুষটাকে। যদিও এখানে আসার আগে মেঘনা সৌম্যদা সম্মন্ধে একটু সাবধান করে ওকে বলেছিল, বুঝে শুনে যেন কথা বলে! এও বলেছিল, সাইটে থাকাকালীন মেঘনা ওকে কোনো ফোন বা মেসেজ করবে না। দেবাশিষও যেন না করে।

-“কেন?”

-“কাজের জায়গায় মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকলে বাজে দেখায়!”

-“এটাই কারণ?” দেবাশিষ একদমই কনভিন্সড নয়।

-“আরো কারণ আছে! সব তোকে বুঝিয়ে বলতে পারব না!” ঝাঁঝিয়ে উঠেছিল মেঘনা।

দেবাশিষ যদিও কথা শোনেনি। কাজ করতে করতে বৃষ্টির জন্য লেবার কলোনির সামনে যখন আটকে ছিল, একটা খবর দেওয়ার অছিলায় ফোন করে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছিল মেঘনার সাথে।

কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিকেলের ট্রেনে ফিরবে বলে রানিগঞ্জ স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের সামনের দিকে দাঁড়িয়েছিল দেবাশিষ। এবার আর রিজার্ভেশন নেই! ব্ল্যাক ডায়মন্ডে যা ভীড় হয়! টেনশন হচ্ছিল দেবাশিষের। তবে ট্রেন ঢোকার পরে অভাবিত ভাবে একটা ফাঁকা কামরা দেখে সেটায় উঠে পড়তে আর দ্বিতীয়বার ভাবেনি।

কপালে নেইকো ঘি…

দুর্গাপুরে ঢোকার কিছু আগে জি আর পি এসে যখন দেবাশিষকে ধরল, তখন বুঝল কি ভয়ঙ্কর ভুল ও করেছে। ফাঁকায় যাওয়ার চক্করে ইঞ্জিনের পরেই যে লেডিস কোচ থাকে, তাতেই উঠে বসেছিল রানিগঞ্জ থেকে। দুর্গাপুর স্টেশনে আরো ১০-১২ জন ছেলের সাথে দেবাশিষকেও জেলে চালান করে দিল জি আর পি। ভয়ে, টেনশনে কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছিল না দেবাশিষ। কোথাও খবর দেওয়ারও উপায় নেই। মোবাইল ফোন পুলিশ নিয়ে রেখেছে। ঘন্টা দেড়েক একইভাবে কাটানোর পরে একটা সুরাহা হল। স্থানীয় এক উকিল আশ্বাস দিলেন পাঁচ হাজার টাকা দিলে জামিনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে টাকাটা আজ রাতেই দিতে হবে। কাল রবিবার, কোর্ট বন্ধ। পরশু সকালেই কোর্টে কেস উঠবে। আজ টাকা না দিলে কোর্টের চক্করে পড়ে গেলেই কেরিয়ারের দফারফা।

দেবাশিষের সাথে অত টাকা নেই! এ বিপদ থেকে একমাত্র সৌম্যদাই ওকে বাঁচাতে পারে। মোবাইল হাতে পেয়েই সৌম্যদাকে ধরল দেবাশিষ। যেমন করেই হোক টাকা নিয়ে এসে ওকে জেল থেকে আজ রাতেই যেন ছাড়িয়ে নেয়।

রাত সাড়ে আটটা নাগাদ দেবাশিষের কাছে ফোনে সব শুনল সৌম্য। এমনই কপাল, সৌম্যর কাছে মোটে হাজার দুয়েক টাকার মত হার্ড ক্যাশ রয়েছে। সৌম্যর আস্তানা থেকে এটিএম বেশ অনেকটাই দূরে। এদিকে বাইরে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নেমেছে। মেটেরিয়াল সাপ্লায়ার শাহজাদার দোকান কাছেই। এইসময় শাহজাদা দোকানেও থাকবে। ওর কাছে গেলে অবশ্য টাকাটা পাওয়া যেতে পারে। বৃষ্টির মধ্যেও বেরনোর জন্য রেডি হয়ে নিল সৌম্য।

রাত দশটার পর

রাত বাড়ার সাথে সাথে মেঘনার মনের অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। দেবাশিষের কোনো খবর পাচ্ছে না যে! শেষবার কথা হয়েছে, যখন দেবাশিষ রানীগঞ্জ স্টেশনে ব্ল্যাক ডায়মন্ড ধরার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। তখনি দেবাশিষ বলেছিল, হাওড়ায় নেমে জানাবে। দশটা বেজে যাওয়ার পরেও ফোন এল না দেখে মেঘনা নিজেই রিং করেছিল। দেবাশিষের ফোন নট রিচেবল। এদিকে ধানবাদ থেকে হাওড়ায় আসার ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস প্রায় সঠিক সময় রাত নটা পঁচিশে হাওড়ায় ঢুকে গেছে। হাওড়া এনকোয়ারি থেকে খবরটা পাওয়ার পরে মেঘনার দুশ্চিন্তা বেড়েছে বই কমেনি।

উফফ, কি ইররেস্পন্সিবল ছেলে! নিশ্চই গেম খেলে সেল ফোনের চার্জ শেষ করে ফেলেছে। বাড়িতে পৌঁছে সেল ফোনে চার্জ দিয়ে খবর দেবে এই আশায় মেঘনা আরো কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করল। গড়িয়ায় নিজের বাড়িতে ত সাড়ে দশটার মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার কথা দেবাশিষের। রাত এগারোটা বাজে এখন প্রায়! চিন্তা ত হওয়ারই কথা। তারওপর ব্যক্তিটি যদি মনের মানুষ হয়, তাহলে মনে নানা অকথা কুকথা ভীড় করে আসতে থাকে। মানসিক এই দোলাচলের জন্য মেঘনা ডিনারে ঠিকমত মনোনিবেশ করতে পারল না! সর্ষে দিয়ে ইলিশ ভাপা আর চিলি চিকেন। মায়ের হাতের এই দুটো প্রিপারেশনই মেঘনার ফেবারিট। কিন্তু উদ্বেগ, রাগ, হতাশা সব মিলেমিশে মেঘনার মনের জগতটা একদম ঘেঁটে। খাবারের কোন স্বাদই পেল না সে।

ল্যান্ডলাইনে ফোন করে খোঁজ নিতে খুব ইচ্ছে করলেও মেঘনা নিজেকে কন্ট্রোল করল। এত রাতে যদি দেবাশিষ না ধরে ওর মা ফোনটা ধরে ফেলেন! তাঁর কাছে মেঘনার পরিচয় এখনো অব্ধি সহকর্মিনী ছাড়া ত আর কিছুই নয়। কথাটা ভাবতেই মেঘনার মনের কোনে কিছুটা অভিমানও এসে জমা হল দেবাশিষের প্রতি। গত ন-দশ মাস ধরে মেঘনা আর দেবাশিষের মধ্যে যে সুনিবিড় ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার সফল পরিণতি যেখানে অনুষ্ঠিত হবে, সেই দেবাশিষের বাড়িতেই এখনো খোলসা করে কিছুই জানায়নি দেবাশিষ। কেন জানায়নি! মেঘনা কিন্তু নিজের বাড়িতে যথেষ্ট হিন্টস দিয়েই রেখেছে প্রথম থেকেই।

দেবাশিষকে নিয়ে টেনশন করার মাঝেই মেঘনার হটাৎ সৌম্যদার কথা মনে এল। ওকে ফোন করলে যদি দেবাশিষের কোনো আপডেট পাওয়া যায়! যদিও রাত এগারোটা! সৌম্যদাকে ফোন করাটা ঠিক হবে কি! যেখানে মেঘনাই রাতে ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিল। রানীগঞ্জে পোস্টিং হওয়ার পরে সৌম্যদা প্রায়ই রাতে ফোন করে অনেকক্ষণ কথা বলত ওর সাথে। কোম্পানির দেওয়া ভাড়া বাড়িতে একা থাকতে থাকতে ফ্যামিলিকে আর সেই সাথে হয়ত ওকেও সৌম্যদা খুব মিস করে, মেঘনা বুঝত। কিন্তু বুঝলেও ওর পক্ষে রাতে সৌম্যদার সাথে দীর্ঘ ফোনালাপ করা সম্ভব ছিল না। রাতের ফোনে দেবাশিষের রোমান্টিকতা রোজ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ না করতে পারলে ওর যে ঘুমই আসবে না!

-“রাতের দিকে তোমার ওদিকে লাইনে খুব ডিস্টার্ব হয়। ঠিকমত কথা শোনা যায় না। রাতে আর ফোন কোরো না সৌম্যদা।” সৌম্যদাকে বারবার এই কথা বলে রাতে ফোন করাটা বন্ধ করেছে মেঘনা।

গরজ বড় বালাই আজ। কোনো উপায় না পেয়ে সৌম্যদার নাম্বারে ডায়াল করে ফেলল মেঘনা!

অতঃপর…

প্রথমবার ফোনটা বেজে যেতে দিল সৌম্য। দ্বিতীয়বারে রিসিভ করল।

-“বলো মেঘনা”

-“সৌম্যদা, দেবাশিষের কোনো খবর জানো? ওকে রিং করে পাচ্ছি না।”

-“হ্যালো…হ্যালো……মেঘনা! মনে হচ্ছে লাইনটা ডিস্টার্ব হচ্ছে। রাতের দিকে এরকম হয়। ঠিকমত কথা শোনা যাচ্ছে না। কাল সকালে কথা হবে। গুড নাইট।“ সৌম্য কেটে দিল ফোন।

শাহজাদার কাছে টাকাটা জোগাড় করতে আর যায়নি সৌম্য। দেবাশিষ জেলে থেকে পচুক। কেমডিএ তে দেবাশিষের আসিস্ট্যান্ট টাউন প্ল্যানারের চাকরিটা এই পুলিশ রেকর্ডের জন্যই আটকে যাবে। দুপুরে দেবাশিষ মেঘনাকে যখন খবরটা দিচ্ছিল, সৌম্য তখনি ঠিক করে মেঘনার সামনে ওকে হিরো হতে দেবে না কিছুতেই। পুলিশের হাতে দেবাশিষের ধরা পড়ার খবরটা যেন মেঘ না চাইতেই জল! যতক্ষণ দেবাশিষের মোবাইলে চার্জ ছিল, বার বার সৌম্যকে ফোন করে করে জানতে চাইছিল টাকাটা নিয়ে ও কখন পৌঁছবে দুর্গাপুর স্টেশনে! কিন্তু কোনোবারই ভাল করে কথা বলা গেল না। রাতে লাইনে খুব ডিস্টার্ব হয় ত!

সৌম্যদার নাম্বারে আবার ট্রাই করল মেঘনা। নট রিচেবল!

-সমাপ্ত-

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*