ইতিহাসের ইতিবৃত্ত; চন্দ্রকেতুগড়

মাসানুর রহমানঃ উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপায় অবস্থিত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থলটি। বিভিন্ন সময়ে স্থানটিকে একাধিকবার খনন করা হয়েছে এবং তার ফলে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রী চন্দ্রকেতুগড়ের প্রাচীনত্ব ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বকে যথেষ্টভাবে প্রমাণ করে। এখান থেকে প্রাপ্ত জিনিসপত্র কলকাতার আশুতোষ সংগ্রহশালা ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু নিদর্শন ওখানেই ব্যক্তিগত সংগ্রহেও রয়েছে। তবে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নামি কিছু সংগ্রহশালাতেও এখানকার কিছু নিদর্শন আছে বলে জানা যায়।

১৯০৯ সালে খ্যাতনামা প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানটি পরিদর্শন করেন এবং এই স্থানটির প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাখা দেন। তবে তখন বহু প্রত্নসামগ্রী মিললেও সেভাবে খননকার্য হয়নি। তারপরে ১৯৫৭ সালে আশুতোষ সংগ্রহশালার উদ্যোগে জয়নগর-মজিলপুর-এর তৎকালীন জমিদার ও পুরাতাত্ত্বিক কালিদাস দত্তের প্রেরণায় এখানে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য শুরু হয়।

তবে স্থানটির নামকরণ নিয়ে ইতিহাসবিদরা মনে করেন কিংবদন্তী বিশ্রুত রাজা চন্দ্রকেতুর নামানুসারেই এই নাম। মৃৎ- দূর্গপ্রাকার পরিবেষ্টিত এই বিস্তৃত প্রত্নক্ষেত্রটি তাই চন্দ্রকেতুগড় নামেই সর্বাধিক পরিচিত।

উৎখননের প্রথম স্তরে ভারতের দ্বিতীয় নগরায়নের সমসাময়িক প্রাক-মৌর্য যুগের প্রত্নসামগ্রী পাওয়া যায়। দ্বিতীয় স্তরে বহু প্রাচীন সামগ্রী সমসময়কার মুদ্রা, বাটি, পাথর, শীলমোহর ইত্যাদি মেলে। তৃতীয় স্তরের খননে কুষাণ যুগের সমসাময়িক নকশা করা পাত্র, মূর্তি পাওয়া যায়। চতুর্থ স্তরে পাওয়া যায় গুপ্ত ও গুপ্তোত্তর যুগের শীল, শীলমোহর, স্বর্ণমুদ্রা, দেব মূর্তি, রাজার বিবাহের প্রতিচিত্র ও পঞ্চম স্তরের পাওয়া প্রত্নাদিকে সম্ভবত পাল যুগের বলেই মনে করেন প্রত্নতত্ত্ববিদগন।

বহু ঐতিহাসিকদের মনে করেন, চন্দ্রকেতুগড়ই হল সম্ভবত ‘পেরিপ্লাস’ এবং টলেমি সূত্রে উল্লিখিত বিখ্যাত প্রাচীন সমুদ্র-বন্দর ‘গঙ্গারিডাই’এর রাজধানী বা গাঙ্গে’বন্দর। প্রত্নস্থলটির সঙ্গে জলপথে প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল বিশেষত রোমের বাণিজ্যিক যোগসূত্রের সুনিশ্চিত প্রমাণ মিলেছে।

সম্প্রতি রাজ্য সরকার চন্দ্রকেতুগড়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরী করার উদ্যোগ নিয়েছে। বেড়াচাঁপায় রাজ্য সরকারের তৈরী করা ‘পথের সাথী’ মোটেলের মধ্যেই এই সংগ্রহশালা নির্মিত হবে।

(তথ্য সংগৃহীত)

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*