স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের মাঝে রূপকথার গল্প শোনাবে ‘যদি একবার’

বর্ণালী দাশগুপ্ত

লোকে বলে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে নেই। তবে স্বপ্ন তো হিসেব কষে দেখা সম্ভব নয়। এ সমাজে কখনও রূপের কাছে গুন আবার কখনও খ্যাতির কাছে পরিশ্রম,কেনা গোলাম হয়ে যায়। রূপকথার ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমির সাজানো গল্প হয়তো বাস্তবে মানায় না! নেপথ্যে থাকা মানুষেরা, যাদের কাজের জন্য সিনেমার পর্দার অভিনেতা অভিনেত্রীরা এতো প্রশংসিত হন, তারা কি বিন্দু মাত্র স্বীকৃতির অধিকারী নয়?

নাট্যকার দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত ওরফে সকলের প্রিয় অভিনেতা তাজু এমনই এক বাস্তবিক রূপকথা ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর নাটকে। বেহালার বাতায়ন এর নাটক ‘যদি একদিন’। ৩০ বছর পর আমরা নাট্যকারকে আবারও মঞ্চে ফিরে পেলাম। তিনি আবারও বুঝিয়ে দিলেন যে অভিনেতার সর্বোচ্চ শিক্ষনীয় এবং যোগ্যতম স্থান থিয়েটারের মঞ্চ। নির্দেশক নবকুমার ব্যানার্জীর অসাধারণ নির্দেশনায় একুশে অক্টোবর শুক্রবার রবীন্দ্রসদনে চতুর্থ বারের জন্য মঞ্চস্থ হলো এই নাটক। ৭ই নভেম্বর মধুসূদন মঞ্চে রয়েছে এই নাটকের পঞ্চমতম অনুষ্ঠান। নবকুমার বাবুর সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি যে তাঁর কাছে ডেডিকেশনটাই একমাত্র দাবী রাখে। দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, তিনি যেমন ভালো একজন নাট্যকার তেমনই ভালো একজন অভিনেতাও। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সহ অনেক গুনি শিল্পীদের সাথে নির্দেশনার কাজ করেছেন নবকুমার বাবু। বেহালার বাতায়নের পাশাপাশি তিনি শৈলশীল নামে আরেকটি দলের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই মুহূর্তে।

অন্যদিকে আমরা কথা বলেছি কস্তুরী চক্রবর্তী, সাহেব ভট্টাচার্য এবং ইন্দ্রাশীষ রায়ের সঙ্গে। যদি একবারের রিহার্সাল চলাকালীন সুব্রত ভট্টাচার্য অর্থাৎ সাহেবের বাবা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এইরূপ পরিস্থিতিতে পরিবার এবং অন্যান্য কাজকর্ম সামলে রাত জেগে হলেও তিনি রিহার্সাল এটেন্ড করেছিলেন। অতএব বোঝা যাচ্ছে যে শুধু অভিনয় দক্ষতা থাকলেই অভিনেতা হওয়া যায় না তার সঙ্গে অভিনয়ের খিদে এবং অভিনয়ের প্রতি সম্মান থাকাটাও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অতনু বোসের সঙ্গে ‘আরও এক পৃথিবী’ নামে একটি সিনেমার কাজ সদ্য শেষ করেছেন অভিনেতা। যেখানে সাহেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে কৌশিক গাঙ্গুলীসহ একজন বাংলাদেশী নায়িকাকে দর্শক বড় পর্দায় পাবেন। এছাড়া রাজা চন্দ্রের সঙ্গে ‘চন্দ্রবিন্দু’ নামেও একটি সিনেমার কাজ সম্প্রতি শেষ করেছেন তিনি। সাহেব ভট্টাচার্য এবং ইন্দ্রাশিষ রায় স্কুল বেলার বন্ধু। পরবর্তীকালে আশুতোষ কলেজে একই সাথে পড়াশোনা করেছেন এবং বলতে গেলে একই সাথে অভিনয়কে ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। সাহেব তাঁর অভিনেতা বন্ধুর সম্পর্কে যে বার্তা আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন তা থেকে স্পষ্ট যে ইন্দ্রাশীষ রায় কেনো আজ ইন্দ্রাশীষ রায় হয়ে উঠেছেন। তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অভিনয় দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং সততাই আজ ঘরে ঘরে তাঁকে লালন রূপে পরিচয় দিয়েছে। বড় পর্দার কাজ এবং ধারাবাহিকের পাশাপাশি ইন্দ্রাশীষ থিয়েটারের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত রেখেছেন নিজেকে। সম্পূর্ণ নাটকটি শেষ হওয়ার পর অসম্ভব ক্লান্তি নিয়েও তিনি সাক্ষাৎকার দিতে এগিয়ে এসেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকারের সময়ে তিনি বললেন ‘কাজের জন্য ক্লান্তিটাই কাম্য! এর চেয়ে বড় পাওনা আর কিছু হতে পারেনা’! একটি বাক্যেই যেন তিনি সবটা খুব সহজে বুঝিয়ে দিলেন।

অন্যদিকে দর্শক ব্যাঙ্গমী অর্থাৎ কস্তুরী চক্রবর্তীর অভিনয় গুণমুগ্ধ। নান্দীকারের হাত ধরে তাঁর অভিনয় জগতে আসা। চাকরি ছেড়ে দিয়ে অভিনয়ের সঙ্গেই বেঁধে নিয়েছেন নিজের জীবনশৈলী। সাহেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে ‘উড়ান’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর বড় পর্দায় বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। সম্প্রতি ‘বনবিবি’ নামে একটি ছবির কাজ তিনি শেষ করেছেন! সেনসিটিভ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে মূলত সুন্দরবনেই শুটিং হয়েছে এই সিনেমার দৃশ্য গুলি।

ইন্দ্রাশিষ রায় এবং সাহেব ভট্টাচার্য ‘যদি একবার’ নাটকের একটি সিনে তাঁদের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের দৃঢ়তা ফুটিয়ে তুলেছেন। যেখানে রনি অর্থাৎ ইন্দ্রাশিষ রায় একজন নামজাদা অভিনেতা এবং প্রযোজক হওয়া সত্বেও সহশিল্পী সুবীর অর্থাৎ সাহেব ভট্টাচার্যকে তীব্র ভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। সেই দৃশ্য মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। ওনাদের পাশাপাশি অন্তরার ভূমিকায় আমরা দেখতে পেয়েছি দেবলীনা কুমারকে। বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী হওয়ার পাশাপাশি তিনি অভিনেত্রী হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। ‘যদি একবার’ নাটকে অন্তরা এবং সুবীরের লাভিং সিন দর্শকদের প্রেমের প্রতি আরও বেশি আবদ্ধ করে তুলবে,এ কথা নিশ্চিত।

নাটকের লাইটিং এবং মঞ্চ উপস্থাপনার সাথে সাউন্ড ডিজাইনিং রীতিমত চমকে দিয়েছে দর্শকদের। নাটকে সমীর সমু এবং ঈশিতা সাহার কন্ঠে যে গানগুলি ব্যবহার করা হয়েছে তাও বেশ প্রশংসনীয়। তাহলে আর দেরি কিসের? ৭ই নভেম্বর মধুসূদন মঞ্চে নাটকটি দেখে আসা যাক! কারণ নাটকের ক্লাইম্যাক্স বদলে দিতে পারে আপনার জীবনও।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*