গল্প স্বল্প- “Old is Gold”

কৃষ্ণকলি

পুজোতেও তোমার ছুটি নেই? অতটুকু ছোটো বাচ্চা ঠাকুর দেখতে যাবেনা…ফিসফিস করে বলে অংশু। পাশের ঘরেই রাত্রির মা আছেন। শুনতে পেলে নাকি মনে কষ্ট পান। মেয়ে জামাই এর সামান্যতম কথা কাটাকাটি ও তাঁর মনে চাপ ফেলে। এমনটাই বলেছে রাত্রি। শেষ কবে রাত্রির সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলেছে অংশু মনে পড়েনা। ও হ্যাঁ মায়ের যাওয়ার দিন। রাত্রি অবশ্য অংশুর কথাকে পাত্তা দেয়না তেমন। কি করে যে অংশু একটা এমএনসির টিম লিডার তা মাথায় ঢোকেনা রাত্রির। কোনও অ্যামবিশন নেই। রাত্রির কাছে ওপরে ওঠার কোন সীমা পরিসীমা নেই। Sky is the limit.

সপ্তমীর দিন একটা সেমিনার অ্যাটেন্ড করতে মুম্বই যাচ্ছে সে। ছোট্ট অত্রি বায়না ধরেছে, মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাবে। কোনও রকমে অত্রিকে শান্ত করে অংশু। রাত্রি বলে ভালো গিফট নিয়ে আসবে। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে পায়ে জুতো গলায় রাত্রি। অংশু বলে পারলে অনুজকে ফোন কোরো। বেরিয়ে যায় রাত্রি। প্লেনে উঠে হোমওয়ার্ক করে নেয় রাত্রি। দেশের অনেক নামকরা মানুষ আসছেন এই সেমিনারে। ভালো বক্তৃতা দিতেই হবে।

সেমিনার শুরু হয়েছে। তৃতীয় বক্তা রাত্রি। বক্তব্য শেষ হওয়ার পর হাততালি পেলো প্রচুর। সেমিনার হলেও এটা কমপিটিটিভ। বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলো রাত্রির। এবার ফলাফল ঘোষণা। চোখ খুললো রাত্রি। প্রথম পুরস্কার পাচ্ছে রাত্রি। আনন্দে কলকাতায় মাকে ফোন করলো। মা আমি পেরেছি। এবার পুরস্কার নেওয়ার পালা। কিন্ত স্টেজে ও কাকে দেখছে? জাজদের মধ্যে অনুজের মা না! অবাক রাত্রি। old is gold ছিলো বক্তৃতার বিষয়বস্তু।ফাটিয়ে বলেছে রাত্রি। বয়স্করা যে আমাদের সম্পদ, বয়স্কদের সাহচর্য যে পরিবারের কতো প্রয়োজন, কেতাদুরস্ত ইংরেজীতে বলেছে রাত্রি।

স্টেজে তখন সঞ্চালক বলে চলেছেন, জাজ হিসাবে আমরা তিনজন senior citizen কেই রেখেছি। একজন চিত্রকর নয়না দেবী, আরেকজন উকিল প্রভাস কুমার আর তৃতীয়জন রিটায়ার্ড অধ্যাপক হৈমন্তী বসু। যদিও সেই পরিচয়ে তিনি বিচারক নন। বিশ্রাম oldage home এর বাসিন্দা হিসেবে তাঁকে ডাকা হয়েছে। পুরস্কার নিতে স্টেজে উঠলো রাত্রি। জাজেরাই পুরস্কার দিচ্ছেন। সঞ্চালক বললেন হৈমন্তী বসুর হাত থেকে পুরস্কার নেবেন রাত্রি বসু। সঞ্চালক বললেন what a coincidence !দুজনেরই সারনেম বসু। স্টেজে উঠে কি করবে রাত্রি? প্রণাম করবে তাকে যাকে প্রায় অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো।

বাধ্য হয়ে অংশু বলেছিলো ভাই অনুজকে কোনও ভালো বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে। অবিবাহিত অনুজের হেড অফিস মুম্বইতে হলেও মাসের মধ্যে ২০ দিন থাকে outstation. সুতরাং মায়ের জায়গা হয় মুম্বই এর বিশ্রাম বৃদ্ধাশ্রমে। তিনবছর হয়ে গেছে। রাত্রি হাত তুলে প্রণাম করে হৈমন্তীকে। এই প্রথম হৃদয় দিয়ে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*