নবরূপের ‘মায়াবী’ যুবভারতীতে মুগ্ধ ফিফা থেকে ক্রীড়াবিদরা

অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ হচ্ছে, আশায় আছি একদিন বড়োদের বিশ্বকাপও হবে এখানে: মুখ্যমন্ত্রী

আজ অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ হচ্ছে, আশায় আছি একদিন বড়োদের বিশ্বকাপও হবে এখানে। মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ উত্তরকন্যা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নবরূপে সজ্জিত বিশ্বমানের বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে এ কথা বললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বিশ্বের সেরা খেলার স্টেডিয়ামগুলির মুকুটে নবরূপে সেজে ওঠা যুবভারতী এক নতুন মণি। স্টেডিয়ামের কাজ দেখে ফিফা ও এআইএফএফ খুশি। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনাতেই এভাবে সাজিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে যুবভারতীকে। বিশ্বকাপ ফাইনাল-সহ ১০টি ম্যাচ হবে কলকাতায়। বিশ্বকাপ আয়োজন সফল করতে সবরকম পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গাপুজোর মণ্ডপগুলিতেও বাংলার ‘জয়ী’ ফুটবল রেখে অভিনবভাবে করা হবে আসন্ন বিশ্বকাপের প্রচার। দিনে তো বটেই, রাতে যুবভারতী যেন আরও মায়াবী। ৪৫ সেকেন্ড অন্তর পালটে যাচ্ছে রং। ঘুরে ফিরে আসছে ছটি রঙের সমাহার। যুবভারতী প্রবেশের মুখেই দুটো পায়ের উপর বিশাল গ্লোব। বাঁদিকে অসাধারণ দুটো প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড। যেখানে বিশ্বকাপের অংশগ্রহণকারী দলগুলি অনুশীলন করতে পারবে। মূল স্টেডিয়ামে ঢোকার এক পাশে জলাশয় তৈরি হয়েছে, এখানে বোট চলবে। চারদিকে ফুলের বাগান। ১ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক পরিকাঠামোর একটি জিমন্যাসিয়ামও তৈরি করা হয়েছে। ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসকে এটির তদারকির দায়িত্ব দিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী।

রবিবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সরকারিভাবে যুবভারতীর ভার ফিফার হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ২৮ অক্টোবর বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত ফিফাই এর দেখভাল করবে।  ফিফা প্রতিনিধিদের হাতে সরকারিভাবে স্টেডিয়ামের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্রীড়া রাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা, ফুটবলার-বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, বিধায়ক সুজিত বসু, বিধাননগরের মেয়র তথা বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, পুর নিগমের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী, প্রাক্তন ফুটবলার শ্যাম থাপা, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, কম্পটন দত্ত, মানস ভট্টাচার্য প্রমুখ। নতুন স্টেডিয়াম দেখে আপ্লুত টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর হাভিয়ের সেপ্পি। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস-সহ রাজ্য সরকারের সবরকম সাহায্য না পেলে এমন বিশ্বমানের স্টেডিয়াম তৈরি করা সম্ভব হত না। সবাই জানেন দু-বছর আগেও কী অবস্থায় ছিল যুবভারতী। আর এখন দেখুন স্টেডিয়ামের চেহারাটাই বদলে গিয়েছে। এখান থেকে আমরা স্টেডিয়ামের দায়িত্ব নিলাম। ২৯ অক্টোবর আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কলকাতায় যে পরিমাণ কাজ হয়েছে এবং যে তৎপরতায় হয়েছে এককথায় অনবদ্য। দুর্দান্ত পরিকাঠামো। এখানে পা রাখা প্রতিটা দলের এই স্টেডিয়ামকে দেখে পাঁচতারা হোটেল মনে হতে বাধ্য। যুবভারতীকে ‘ফুল মার্কস’ও দিয়েছেন সেপ্পি। যুব বিশ্বকাপের গ্রুপ ‘এফ’-এর ম্যাচগুলি হবে কলকাতায়। খেলবে ইংল্যান্ড, মেক্সিকো, ইরাক ও চিলি। পরবর্তী পর্যায়ে ব্রাজিল, স্পেনের আসার সম্ভাবনাও থাকছে। কলকাতায় প্রথম খেলা ৮ অক্টোবর। ৩ অক্টোবরের মধ্যে সব দল পৌঁছে যাবে কলকাতায়। জানা গিয়েছে, বিশাল এই কর্মযজ্ঞে খরচ হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ। এর পুরোটাই খরচ করেছে রাজ্য সরকার। নতুনভাবে সেজে ওঠা স্টেডিয়ামের মোট আসন সংখ্যা ৮০ হাজার। কিন্তু বিশ্বকাপে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ফিফা কর্তারা ৬৬ হাজার ৬৮৭ টি আসন মঞ্জুর করেছেন। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের জন্য গত দেড় বছর বন্ধ ছিল স্টেডিয়াম। কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ। বাকিটা কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। অরূপ বিশ্বাস বলেন, নির্ধারিত দিনেই আমরা যুবভারতী ফিফার হাতে তুলে দিলাম। প্রেস বক্স আর সৌন্দর্যায়নের সামান্য কাজ বাকি আছে। নতুনভাবে সেজে ওঠা স্টেডিয়ামের মোট আসন সংখ্যা ৮০ হাজার। কিন্তু বিশ্বকাপে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ফিফা কর্তারা ৬৬ হাজার ৬৮৭ টি আসন মঞ্জুর করেছেন। এ প্রসঙ্গে সেপ্পি জানান, সমর্থকদের নিরাপত্তাই আমাদের কাছে অগ্রাধিকার। তাই আসনসংখ্যা কিছুটা কমছে। যেভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে কোনও সমস্যা দেখা দিলে আট মিনিটের মধ্যে দর্শকদের বাইরে বের করে স্টেডিয়াম ফাঁকা করে দেওয়া যাবে।

বদলে যাওয়া যুবভারতী দেখে মুগ্ধ ক্রীড়াবিদরাও। ভারতীয় দলের উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা বললেন, যুবভারতীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম খুব সুন্দরভাবে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। আমি নিশ্চিত এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে খেলোয়াড় থেকে সাধারণ দর্শক সকলেই এই স্টেডিয়াম নিয়ে দারুণ এক্সাইটেড থাকবেন। পরিকাঠামো উন্নয়নের এই সুফলও মিলবে। চাইব, বিশ্বকাপে ভারতের যে দল খেলবে সেই ফুটবলাররা ভবিষ্যতে সিনিয়র দলের হয়েও দেশকে ভালো সার্ভিস দিতে পারবেন। দাবাড়ু গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া বললেন, অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ কলকাতায় হচ্ছে, এতোগুলি ম্যাচ হচ্ছে এটা কম কথা নয়। এখান থেকেই আমরা ভবিষ্যতের তারকাদের পাব। আমরা আরও বড়ো বিশ্বকাপ আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছি, তবে তার আগে এটি ভালোভাবে করতে হবে। আমি সল্টলেকে থাকি। সন্ধেবেলা হাঁটতে হাঁটতে যুবভারতীতে গিয়ে বারবারই অবাক হই। যেভাবে সেজে উঠেছে, আলোয় সুসজ্জিত ভিতরের ক্যাম্পাসটা অসাধারণ। আমার মতে, সকলের সেখানে গিয়ে দেখা উচিত, অনুভব করা উচিত এই ভালো কাজ। সৌন্দর্যায়নের অনবদ্য কাজ হয়েছে। সৌভাগ্য হলে খেলা দেখতে পারব। তবে মন থেকে চাইছি, ভারত অন্তত সেমিফাইনালে যাক।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*