বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার রাজনন্দিনী, স্বামীর লাগাতার অত্যাচার নিয়ে প্রতিবাদ ‘সম্পূর্ণা’র

বর্ণালী দাশগুপ্ত

বিষাক্ত সম্পর্ক বয়ে নিয়ে এগোনোর চেয়ে একাকীত্ব ঢের ভালো। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মহিলাদের এক বৃহদাংশ আজও জীবনসঙ্গীর সমস্ত অপরাধ মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন সংসার জীবনে। রাজনন্দিনীও তাঁদের ব্যতিক্রম নন। প্রতি রাতে আদরের নামে স্বামীর দেওয়া বীভৎস ক্ষতগুলো শরীরে জমতে থাকলেও সে মুখ খুলতে নারাজ। মধ্যবিত্ত পরিবারে দিনযাপন করা সাধারণ মানুষের মধ্যে কী ধরনের মানসিকতা কাজ করে তার হদিশ মেলে ‘সম্পূর্ণা’র মাধ্যমে।

বর্তমানে এই সময়ে দাঁড়িয়েও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শিকড়ের বিস্তৃতি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, তা-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল। দেশের বধূ নির্যাতনের রূপটা কেবলমাত্র মারধর কিংবা মোটা অংকের টাকার দাবিতেই সীমাবদ্ধ নয়। বিয়েকে কীভাবে কিছু প্রকার ব্যক্তি ধর্ষণের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করছে, তারই একপ্রকার চিত্র এঁকেছেন এই ফিল্মমেকার।

তবে রাজনন্দিনীর ঠোঁটের পাশের কালশিটে, ধীরে ধীরে ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়া, পিঠের কাছে গভীর ক্ষত চিহ্ন – অন্যদের চোখ এড়িয়ে গেলেও তার বড় জা অর্থাৎ সোহিনীর চোখ এড়ায়নি। প্রথমে এ বিষয়ে মুখ খুলতে ভীরু রাজনন্দিনীর একটা সময় পর দেওয়ালে পিঠ থেকে যায়। অনুজা চট্টোপাধ্যায়ের লেখা এই তীব্র গোপন অন্যায়ের কাহিনী বাংলা চলচ্চিত্র বা ওয়েব সিরিজ জগতের দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

বেশ কিছু চেনা মুখ দেখা গেছে এই ওয়েব সিরিজে। সোহিনী সরকার থেকে শুরু করে রাজনন্দিনী পাল, প্রান্তিক ব্যানার্জি, লাবনী সরকার এবং মহিলা পুলিশের ভূমিকায় পারমিতা মুখার্জি। অনুভব কাঞ্জিলালের অভিনয় দক্ষতার এক বিশেষ নিদর্শন ঘটল ‘সম্পূর্না’র হাত ধরে। এই কাহিনীতে আমরা দেখতে পেয়েছি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধুনিক কার্যক্রমিক রূপ। এ দেশের মহিলারা যে সংসার জীবন ত্যাগ করলে একেবারেই একঘরে হয়ে যায় না তার কিছুটা আশ্বাস পাওয়া গেছে মহিলা হোম গুলির দৃশ্য থেকে।

২৯ শে জুলাই ২০২২ এ বহুল জনপ্রিয় ওটিটি প্লাটফর্ম হইচইতে এই ওয়েব সিরিজ রিলিজ করেছে। এসভিএফ প্রযোজিত এই ওয়েব সিরিজের মধ্য দিয়ে বৈবাহিক জীবনের কলহকে লুকিয়ে না রেখে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার এক জোড়ালো বার্তা পাওয়া গেছে। রাজনন্দিনীর বড় জা অর্থাৎ জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোহিনী সরকার এই প্রতিবাদে কিভাবে নিজের শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের বিপক্ষে গিয়েও তার পাশে দাঁড়ালো, সেই গল্প জানতে অবশ্যই সামনের উইকেন্ডে দেখে ফেলুন ‘সম্পূর্না’। পরিচালকের কথা অনুযায়ী খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে এই ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় এবং অন্তিম ভাগ। চোখ থাকুক রোজদিনে!

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*