ককপিটে দেব মানেই সেফ ল্যান্ডিং

নীলেন্দু শেখর ত্রিপাঠী : চাঁদের পাহাড়ের পর কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও দেবের জুটি রুপোলি পর্দায় আবার কি ম্যাজিক তৈরি করতে পারে, তা দেখার আগ্রহ নিয়েই ককপিট দেখতে বসেছিলাম। দেব-এর চ্যাম্প বক্স অফিসে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি। যদিও তাঁর চেষ্টার তারিফ করতেই হয়, কারণ প্রযোজক হিসেবে প্রথম সিনেমাতেই বেশ অন্য ধারার একটি প্রয়াস করেছিলেন। দ্বিতীয় ফিল্ম-এ আরও সাহসী তিনি। যখন তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী জিৎ একের পর এক মশালা মুভি উপহার দিয়ে চলেছেন দর্শককে, তখন তাঁর ‘ককপিট’-এর মতো বিষয় নিয়ে ছবি বানানোটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। কারণ, বাংলা সিনেমা তো বটেই, ভারতীয় সিনেমাতেও আকাশপথে ৩৬ হাজার ফিট উপরে আড়াই ঘণ্টার একটি সিনেমার অর্ধেক দৃশ্যের শুটিং হচ্ছে তা বোধহয় আগে কখনও দেখা যায়নি। হয়ত আপনারা ভাবছেন, তা হলে কি বাংলার সিনেমার ইতিহাসে সবথেকে বিগ বাজেটের সিনেমা ককপিট? আজ্ঞে না। মাত্র ৪ কোটি টাকাতেই এই সিনেমাটি তৈরি করেছেন দেব ও কমলেশ্বর। তবে ব্রেক ইভেন-এ পৌঁছোতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলবে।

 

যাইহোক, ছবির বিষয়বস্তুতে ফেরা যাক। সিনেমাটির শুরুতেই দেখা যায় টলিউডের বেতাজ বাদশা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। ক্যামিও রোলে অভিনয় করা ক্যাপ্টেন দিবাকর রক্ষিত (প্রসেনজিৎ)-এর বিমানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় অন্য একটি বিমানের। তাঁরই পুত্র হিসেবে পর্দায় প্রবেশ দেব-এর। চরিত্রের নাম ক্যাপ্টেন দিব্যেন্দু রক্ষিত। পাইলটের ভূমিকায় ব্ল্যাক শুট, ক্যাপ ও সানগ্লাসে দেব আসতেই মাল্টিপ্লেক্সেও উল্লাস বুঝিয়ে দেয় কেন তিনি এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের এক নম্বর সুপারস্টার। উচ্চারণগত সমস্যা তাঁর কেরিয়ারে শুরু থেকেই ছিল। এই সিনেমাতেও তা অব্যাহত। কিন্তু শারীরিক অভিব্যক্তিতে তিনি মন জয় করে নিয়েছেন। বিমানকে সফল ল্যান্ডিং-এর জন্য তাঁর আপ্রাণ চেষ্টার দৃশ্যে চোয়াল শক্ত করা টান টান অভিনয় দেখার সময় মনে হয় দেব সত্যিই অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন। সিনেমায় রুক্মিনী মিত্রকে দেখা গেছে এক এয়ারহোস্টেস (কীর্তি সচদেব)-এর ভূমিকায়। এটি তাঁর দ্বিতীয় সিনেমা। কিন্তু দেখলে মনে হবে, বহু ছবির অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে। উজাড় করা অভিনয় করেছেন রুক্মিনী। সে দিক দিয়ে দেব-এর স্ত্রীর ভূমিকায় কোয়েল (রাই রক্ষিত) অনেকটাই জোলো তাঁর কাছে। পাটায়ার কোরাল আইল্যান্ডে এই দুই হিরোইনকে নিয়ে রোম্যান্টিক গানের দৃশ্য খুব একটা চোখ টানেনি। সিনেমার একটি মাত্র গানই একটু মন ছুঁয়ে যায়। তা হলো, আতিফ আসলামের গলায় ‘মিঠে আলো’। যদিও ঝাঁ চকচকে সিনেমাটোগ্রাফি ও রবিরঞ্জন মৈত্রের মেদহীন এডিটিং তারিফযোগ্য। সব মিলিয়ে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের এই সিনেমা বাংলা চলচ্চিত্রে একটি নতুন ধারার সূচনা করল। ককপিটে বসে দেব প্রমাণ করলেন বাংলা ছবির অবস্থা যতই টালমাটাল বলে সমালোচিত হোক না কেন, তিনি পাইলট হলে সেফ ল্যান্ডিং অনিবার্য।

সিনেমা : ককপিট পরিচালক : কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় অভিনয় : দেব, রুক্মিনী মিত্র, কোয়েল মল্লিক

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*