নতুন করে ক্লাসরুমে

তপন মল্লিক চৌধুরী

কথায় বলে সুযোগ জীবনে একবারই আসে আর তার ব্যবহার যথাযথ না হলে পরে পস্তাতে হয় । কারও ক্ষেত্রে প্রথম সুযোগ চলে যাওয়ার পর আরেকবার ফিরে আসে সেটা কাজে লাগাবার জন্য । শৈশব-কৈশোরে স্কুলের গণ্ডি পেরনোর আগেই কিম্বা ঊচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আনেকের কাছেই এমন এক সুযোগ এসে ধরা দেয় যা তাকে হাতছাড়া করা যায় না । তখন রুটিনমাফিক পড়াশোনা ছেড়ে সেই কাজেই জড়িয়ে পড়তে হয় । অনেকেই এইভাবে তাঁর করমক্ষত্রে তারকা হয়েছেন। সেই তারকাদের কেউ কেউআবার পরে নতুন করে শুরু করেছেন তাঁর শিক্ষাজীবন । এমনই কয়েকজন তারকার কথা বলা হল এখানে ।

শুটিং ফ্লোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ

ট্যক্সিড্রাইভার আর ফিকিফ্রাইডে মাত্র দুটি ছবির জন্যই আলোচিত নাম জোডি ফোস্টার । ইচ্ছে ছিল বিশ্ববিদ্যলের গণ্ডি পেরোবার কিন্তু অভিনয় জীবনের ব্যস্ততায় সেটা আর ঠিক সময়ে হয়ে ওঠেনি । কিন্তু তাতে কী, ইচ্ছেটা তো আন্তরিকভাবেই ছিল । আর সেটা মনের মধ্যে যত্ন করেই রেখেছিলেন বহুদিন । তারকাখ্যাতিকে একপাশে রেখে বয়স যখন ত্রিশের কোঠায় তখন তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলেন সাহিত্য নিয়েপড়াশোনা করতে । একদিন সেই পাঠ শেষও করেন । ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন জোডি ফোস্টার ।

একসঙ্গে অস্কার মনোনয়ন ও পড়াশোনা

২০০৪ সালে সেরা সহযোগী অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন নাটালি পোর্টমান । ওই বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন পোর্টমান । ১৯৯৪ সাল থেকে টেলিভিশন আর সিনেমা নিয়েএতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি । এর মধ্যে নাচ শিখেছেন, স্টারওয়াস সিনেমায় অভিনয় করেছেন—আরও বহু কিছুতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ান । শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালে ফের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েভর্তি হন । এরপরই মনোবিজ্ঞানে স্নাতক হন নাটালি ।

ডক্টরেট ডিগ্রির পরেও

যে বয়সে বিখ্যাত ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিতে আসেন, সেই ৫৫ বছর বয়সে পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হন চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবারগ । স্কুল-কলেজে টেনেটুনে পাসকরেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে এতবার ‘সি’ গ্রেড পেয়েছেন যে তিনি আর টিকতে পারেননি । বিখ্যাত হওয়ার পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করে । কেবল তাই নয় ২০০১ সালে ক্যাল স্টেটলং বিচ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ ডিগ্রির জন্য আবার ভরতি হন তিনি । তিখন তাঁর পড়ার বিষয় ছিল চলচ্চিত্র ও ইলেকট্রনিক আর্টস । চলচ্চিত্র তো নিজের বিষয় তাঁর, কে ঠেকায় স্পিলবার্গকে । কিন্তু এরপরও কোনোমতেডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি জয় করেন স্পিলবারগ ।

অনলাইনে হিলারির পড়াশোনা

খুব অল্প বয়স থেকেই জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ও গায়িকা হয়ে ঊঠেছিলেন হিলারি ডাফ । তারকাখ্যাতি আর ব্যস্ততার কারণে ঠিক সময়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি । সেই হিলারি ২০০৫ সালে হার্ভার্ডবিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন কোর্সে ভর্তি হয়ে রাজনীতি আর প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং একসময়ে তা শেষ করেন ।

বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ লিখেছেন ক্রিস্টেন!

টোয়াইলাইটস সিনেমার জন্য আলোচিত নাম ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট । শৈশব থেকেই শুরু হয়ে যায় সিনেমা আর টেলিভিশন স্টুডিওতে দৌড়াদৌড়ি । এর ফলে ঠিক সময়ে পড়াশোনাই শেষ করতে পারেননি তিনি । সেই ক্রিস্টেন২০১৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করলেও ২০১৭ সালে এক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করে ফের আলোচিত হন । বিজ্ঞান না পড়ে কীভাবে নিবন্ধ লেখেন তিনি তা নিয়েবেশ সমালোচনা শুরু হয়ে যায় ক্রিস্টেনকে নিয়ে ।

ছদ্মবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে শাকিরা

২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য নতুন করে ক্লাস শুরু করেন গায়িকা শাকিরা । নিজের আসল নাম নিয়ে ভরতি হন বলে প্রথম দিকে কেউ টের পাননি । তাছাড়া ক্লাসে একটু অন্য রকম ছদ্মবেশে আসতেন বলেও কেউবুঝতেই পারেননি যে তিনি শাকিরা । কিন্তু পাপারাজ্জিদের কল্যাণে সবাই মাসখানেক পরে টের পেয়ে যান আসল ঘটনা । সেই শাকিরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*