ভীতু ছেলে

সপ্তাশ্ব ভৌমিকঃ

আমি পর্ণার প্রাইভেট টিউটর। পড়াতে যাওয়ার ক’দিন থেকেই ওর হাবভাব একটু কেমন মনে হত। এক কোটিপতি ব্যবসায়ীর সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক হওয়ার হঠাৎ এসে বলল “আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাও।” আমি তো হতভম্ব। কোটিপতি ব্যবসায়ী ছেড়ে স্কুলের টিচার। ওর বাবা আমাকে গুম করে দেবে। ওকে অনেক বোঝালাম। ও তবু অবুঝ। আমার মধ্যে ও কী পেল। অল্প বয়সের পাগলামো ? আমি এতদিন ধরে ওকে পড়িয়েছি, কিন্তু কোনোদিন ওকে ভালো করে দেখিনি। হয়তো ওদের প্রাসাদের মতো বাড়ির করিডর দিয়ে ঢুকতেই কোনো হীনমন্যতার বোধ এসে দেখার চোখ অন্ধ করে দিত। আজ যেন ওকে নতুন করে দেখলাম। এত স্নিগ্ধ, এত সুন্দর! ও তো অ্যাডাল্ট। বিয়ে করে নেব। পরক্ষণেই রিজয়ানুরের মৃত মুখ মনে পড়ল। ওর স্নিগ্ধ রূপের আড়ালে এমন তীব্র জেদ লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। ও স্পষ্ট জানাল আমার থেকে দুদিনের মধ্যে কোনো রেসপন্স না পেলে সুইসাইড করবে। আমি ওর কথাকে গুরুত্ব দিইনি। জানি এ-সব প্রাচুর্যের পাগলামো। আমাকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার খেলা। কিন্তু তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় ওর বাড়ির সামনে বিরাট ভিড় দেখে ঘাবড়ে গেলাম। বুকের ভেতর কেমন হিমেল স্রোত। কাছে যেতেও ভয় করছে। একজন পথ-চলতি মানুষের থেকে জানলাম সন্ধ্যাদীপ থেকে নাকি ওর গায়ে আগুন লেগেছে। পর্ণা মরেনি। ওর পিঠ, গলা, মুখের অনেকটা পুড়ে গেছে। সেই বিয়ে আর হয়নি। হঠাৎ মনে হল পর্ণার মুখটা যেভাবে পুড়েছে, কেউ ওকে চট করে বিয়ে করবে না। এখন ওর বাবা আমার মতো পাত্র পেলে রাজি হয়ে যাবে। ভাবতেই আমার শরীর থেকে সমস্ত লুকোনো গ্লানি দূর হয়ে গেল। মনে হল যেন স্নান সেরে উঠলাম। আবেগ, উত্তেজনায় ফুটতে ফুটতে আমি দ্রুত পর্ণার বাড়ি পৌঁছে গেলাম। বিয়ের প্রস্তাব শুনে পর্ণা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর খুব স্পষ্ট করে বলল, “আমি কোনো ভীতু ছেলেকে বিয়ে করব না।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*