ছেলে সেজেই দিন শুরু হয় এই মেয়ের

বিশেষ সংবাদদাতা –
এছাড়া যে আর কোন পথ নেই৷ নিজের কথা না ভেবে শুধুমাত্র পরিবারের জন্য এই পথ বেছে নিয়েছে সিতারা৷ সংসার চালাতে এবং পরিবারের দেনা শোধ করতে রোজ বাবার সঙ্গে কাজে বের হয়৷ প্রতিদিন ৫০০ ইট তৈরি করে৷ দৈনিক মজুরি ১৬০ আফগানিস(দুই ডলারের সামান্য বেশি)৷
প্রতিদিন সকালে শার্ট ও প্যান্ট গলিয়ে কাজে বের হয় সিতারা ওয়াফাদার৷ সে ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে৷ রোজ সকালে নিজের ‘মেয়ে’ পরিচয় গোপন করে ছেলে সেজে কাজে বের হয়৷ দশ বছর ধরে ছেলে সেজে থাকতে থাকতে এখন নিজের অস্তিত্বকেই ভুলতে বসেছে সে৷
পাঁচ বোনের মধ্যে বড় সিতারা৷ ছেলে না থাকায় পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে তাঁকে৷ আফগান পরিবারে ছেলের যা ভূমিকা তা সবকিছুই এখন পালন করতে হয় সিতারাকে৷ তবে আফগানিস্তানের মতো সমাজে মেয়েদের কাজ করার উপর রয়েছে অনেক বিধিনিষেধ৷ তাই নিজের সব শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে পরিবারের মুখ চেয়ে ছেলে সেজে কাজ করতে বের হয়৷
সিতারার বাবারও এই নিয়ে আফসোস কম নয়৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ আজ আমার ছেলে থাকলে বড় মেয়েকে দিয়ে এই ভাবে কাজ করাতাম না৷ সিতারার কাঁধে অনেক দায়িত্ব৷ পরিবারের লোন শোধ করতে হবে৷’’ সিতারা জানিয়েছে, ‘‘এখন আর মনে হয় না আমি মেয়ে৷ আমার বাবা তো সবসময় বলে, সিতারা আমার বড় ছেলে৷’’
সেই আট বছর বয়স থেকে বাবার সঙ্গে ইট ভাটায় কাজ করতে যাচ্ছে৷ প্রতিদিন সকালে ছেলে সেজে বাড়ি থেকে বের হয়৷ তার আসল পরিচয় যাতে কেউ টের না পেয়ে যায় তার জন্য অনেক সতর্ক থাকতে হয় সিতারাকে৷ বড় চুল কেটে ছেলেদের মতো ছোট করে দিয়েছে৷ কথা বলার সময় গলার স্বর পরিবর্তন করে৷ যাতে মনে হয় কোনও ছেলে কথা বলছে৷ সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে সিতারা জানিয়েছে, ‘‘যখন কাজে যাই কেউ টের পায় না আমি মেয়ে৷ যদি তারা জানতে পারে ১৮ বছরের একটা মেয়ে এখানে কাজ করতে আসছে তাহলে অনেক সমস্যায় আমায় পড়তে হবে৷ এমনকী আমাকে অপহরণও করা হতে পারে৷’’
এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ‘চিত্রাঙ্গদা’ হয়ে পরিবারের পেট চালাচ্ছে সিতারা৷

ছবিঃ সূত্র থেকে প্রাপ্ত

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*