অনুগল্পঃ স্যান্টাক্লজ

পায়েল খাঁড়াঃ

বড়দিনের আগের রাতে দরজার মাথায় মোজা বাঁধাটা লাবণীর ছেলেবেলাকার অভ্যেস। প্রতিবছর সে কিছু না কিছু উপহারও পেত।বয়স বাড়ার সাথে আসল ব্যাপারটা বুঝলেও ওই লম্বা সাদা দাড়িওয়ালা পেট ভুড়কো স্যান্টাক্লজকে কল্পনা করতে একটা অন্য রকমের রোমাঞ্চ অনুভব করত সে।
“আচ্ছা লাবণী, তুই কি সেই ছোট্টটি আছিস যে এখনও স্যান্টার গিফট পাবি? ছেলেমানুষিগুলো কবে ছাড়বি বলত…” মায়ের কথাগুলো হেসে উড়িয়ে দিত লাবণী। কিন্তু সে যে সত্যিই বড় হয়ে গেছে—কথাটা তাকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ানো হল শ্বশুরবাড়িতে।
প্রতিবারের অভ্যেসমত এবছরও দরজায় মোজা টাঙাচ্ছিল লাবণী, একটা তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ এসে বিঁধল ওর কানে—“ হ্যাঁ রে ছোট, নিজেকে কি এখনও কচি খুকি মনে করিস নাকি? কি ভাবছিস স্যান্টাক্লজ সত্যি সত্যিই এসে তোকে গিফট দিয়ে যাবে। কত্ত ঢং আর দেখব__বল তাহলে এবার গোদল বাটিও বের করি তোর জন্য।”
নতুন বিয়ে তারউপর বাড়ির ছোটবউ, বড় জায়েদের এ হেন শব্দ আক্রমনে রীতিমত ঘাবড়ে গেল লাবণী, তারপর নিজেকে খানিকটা সামলে আমতা আমতা করে বলল—“ ও ভাবে বলছ কেন দিদিভাই, আমি তো জাস্ট এমনিই…
বাড়িতে প্রতিবছরই করতাম তাই ভাবলাম…”
ঠাকুরঘর থেকে রাতের জপ সেরে নেমে আসছিলেন লাবণীর শাশুড়ি। পুত্রবধূর জবাব শুনেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন—“ তোমার বাড়িতে কি করতে সে কথা ছাড়। আমরা তো আর ফিরিঙ্গি নই যে তুমি সোহাগ করে তাদের উৎসব পালন করবে।এ বাড়িতে বাপু ওসব আদিখ্যেতা চলবে না__বুঝলে!”
এধরনের ব্যবহারে একেবারেই অনভ্যস্ত ছিল লাবণী।লজ্জায় কষ্টে তার মুখ কালো হয়ে গেল।কোনোমতে চোখের জল লুকিয়ে তড়িঘড়ি নিজের ঘরে ঢুকে গেল সে। তারপর স্যুটকেস থেকে বাবার ফটোটা বের করে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল।

একটা আলতো আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল লাবনীর।তার সামনের দিকেই একটা ব্যলকনি।সেদিকে তাকিয়ে নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারল না সে। ব্যলকনিতে একটা গিফট বক্স হাতে ওটা কে দাঁড়িয়ে? সেই সাদা লম্বা দাড়ি সেই লাল ঝোলাকোট, পিঠে একটা মস্ত ঝুলি—স্যান্টাক্লজ। ঠিক যেমনটা ওর কল্পনায় ছিল__সেই স্যান্টাক্লজ!

অ্যালার্মের শব্দে ধড়মড়িয়ে উটে বসল লাবণী।তবে কি সে স্বপ্ন দেখছিল! নিজের বোকামিতে একরকম হাসিই পেল তার।হঠাৎ ব্যলকনির খোলা দরজাটায় চোখ পড়তেই সে চমকে উঠল।
“কী আশ্চর্য! দরজার ফ্রেমে যে মোজাটা সত্যিই ঝুলছে? আর ওর ঠিক নীচেই রাখা একটা গিফট।লাবনী দৌড়ে গিয়ে সেটা খুলল আর অমনি একটা মিষ্টি পরিচিত পারফিউমে ভরে গেল তার নিঃশ্বাস।বক্সের ভিতর থেকে বেরল একটা সুন্দর আংটি আর একটা সুদৃশ্য কার্ড যাতে লেখা, ‘ উইদ ইউ ফরেভার…’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*