ভারতীয় সংস্কৃতির ধ্বজাধারীদের মুখোশ খুলে পড়ছে

প্রায় একই বিষয়ে আবারও একটি উত্তর সম্পাদকীয় লিখছি। বলা বাহুল্য, লিখতে বাধ্য হচ্ছি। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ যোগদানের পর একের পর এক অভিযোগের তির মেরে ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে তাঁকে। তাহলে কী বিজেপি ভয় পেয়েছে? এর আগে সুশীল মোদীর মতো অভিজ্ঞ বিজেপি নেতা তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ বিহারের অপর এক মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বিনোদ নারায়ণ ঝা প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা আমরা আগেই করেছি। আমরা আশা করেছিলাম এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপি আর কোনও উচ্চবাচ্য করবে না। কিন্তু সে আশা যে কতটা ভুল তা প্রমানিত হলো।

বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় আবারও প্রিয়াঙ্কার রূপ নিয়ে কুরুচিকর ইঙ্গিত করলেন। তিনি বলেন যে, দাদা রাহুল বিশেষ কিছু করতে না পারায় বোন প্রিয়াঙ্কার “Chocolaty Face” দিয়ে কংগ্রেস ভোটের বাজারে বাজিমাত করতে চাইছে। এখানেই শেষ নয়। প্রবীন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আরও নীচে নেমে বলা যায় Below the belt hit করলেন প্রিয়াঙ্কাকে। তিনি বললেন, প্রিয়াঙ্কার নাকি বাইপোলার ডিসঅর্ডার আছে। স্বামীর বক্তব্য মানসিক রোগী প্রিয়াঙ্কা মাঝে মাঝে হিংস্র হয়ে ওঠেন। তখন তিনি সামনের মানুষজনকে মারধরও করেন। এরকম লোকের রাজনীতিতে আসা ঠিক নয়।

এই বক্তব্যগুলি আদপে বিজেপি নেতৃত্বের মানসিক বিকারের পরিচয় বলে আমাদের মনে হয়। এরআগেও রাহুল গান্ধীকে “বিদেশিনীর ছেলে” বলে অপদস্ত করার চেষ্টা করেছিলো বিজেপির প্রথম সারির নেতারা। সোনিয়ার ছেলে হওয়ায় রাহুল ভারতমাতাকে সম্মান করার শিক্ষা পান নি। ইতালীয় মায়ের ছেলে হওয়ায় তিনি ইতালিকেই নিজের দেশ ভাবেন। সোনিয়া গান্ধীকে তাঁর সারা জীবনে বারেবারে বিদেশিনী কটাক্ষে বিদ্ধ হতে হয়েছে। ইউপিএ ওয়ানের সময় যখন কংগ্রেস সর্বসম্মতভাবে সনিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার কথা ভেবেছিলো তখন আজকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৎকালীন বিজেপির সামনের সারির নেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, সোনিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে আমি মাথা ন্যাড়া করে ফেলবো।

তবে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর প্রিয়াঙ্কাকে মানসিক রোগী বলা সবকিছু অভিযোগকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল বা তার সদস্যদের প্রতি ন্যূনতম সৌজন্য তো দূর অস্ত বারেবারে তাঁকে আক্রমণ করে বিকৃত রুচির পরিচয় দিচ্ছে বিজেপি। এই বিজেপিই দাবি করে তারা ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। একজন মহিলার রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে যে কুরুচির পরিচয় দিচ্ছে বিজেপি তাতে বলা যায়, ভারতীয় সংস্কৃতির তথাকথিত ধ্বজাধারীদের মুখোশ খুলে গেছে। দেখা যাচ্ছে বিকৃত মুখ। এর শেষ কোথায় আমরা জানি না, কিন্তু এই আক্রমণ, এই কুরুচির ফল যে ভালো হবে না সেকথা এখনই বলে দেওয়া যায়। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রাজনীতিতে সফল হোন বা না হোন তাকে ব্যক্তি কুৎসার তীরে বারবার বিদ্ধ করে রক্তাক্ত করা বন্ধ হোক।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*