ইঁদুরদৌড় নয় চেষ্টা চালিয়ে যাও, এই হোক পড়ুয়াদের মূল মন্ত্র


মাসানুর রহমান,

প্রতিযোগিতা নয় চেষ্টা চালিয়ে যাও, চেষ্টাই সাফল্যের চাবিকাঠি। শিক্ষা ব্যবস্থায় একদিকে সমাজের প্রায় সর্বত্রই যেখানে কেবলমাত্র নম্বরের ঘেরাটোপে আটকে, আর সেই অতিরিক্ত চাপেই জর্জরিত শৈশব। ঠিক এমন সময় দিল্লীর আর এক মা সকলকে চমকে দিয়ে বলেন, ইঁদুরদৌড় নয় পড়াশোনায় সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাও এটাই এনে দেবে আলোকময় আগামী। তাঁর বার্তা স্পষ্ট জানান দেয় পরীক্ষায় ৯৮-৯৯% নম্বর সব নয় ৬০%তেও বেজায় খুশি তিনি৷ আর এই ৫০% নম্বরই আগামীদিনে সন্তানদের ১০০% সাফল্য এনে দেবে এমনটাই তাঁর ধারণা।

এই মায়ের নাম বন্দনা সুফিয়া কাটোচ, তিনি দিল্লির বাসিন্দা। পড়াশোনায় মোটমুটি ভালো তাঁর সন্তান তবে এই মোটামুটিকেই অত্যন্ত মেধাবী বলেছেন মা বন্দনা৷ সিবিএসই রেজাল্ট বার হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে চলেছে প্রাপ্ত নম্বরের চুলচেরা বিশ্লেষণ, কার কতো পার্সেন্টেজ?  কে কত মোটের উপর? এই নিয়ে সরগরম আলোচনা। তবে তা থেকে এক্কেবারে অন্য পথে হেঁটেছেন বন্দনা৷ বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁর ছেলে ৬০% নম্বর পেয়েছে।সকলকে খানিকটা স্তম্ভিত করে ছেলের মাথায় স্নেহের হাত রেখে তিনি বলেন, “আমি প্রচণ্ড গর্বিত।” চাইনা পড়াশোনায় ইঁদুড়দৌড় চাই পরিশ্রম। সমকালীন সময়ে যেখানে একদিকে প্রায় গোটা সমাজের সিংহভাগ অংশই নম্বরের ভিত্তিতে মাপতে চলেছে ওজন, সেখানে দাঁড়িয়ে বন্দনার এই উক্তি পৃথক করেছে ভাবনাকে, প্রতিটি সন্তানের মনে নিয়ে এসেছে এক নতুন আলোর সন্ধান।

এখানেই শেষ নয় নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে ছেলের প্রশংসা করে বন্দনা যা লিখেছেন তা হলো খানিকটা এরকম, “আমার ছেলে বোর্ড পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে, আমি প্রচণ্ড গর্বিত। জানি নম্বরটা ৯০% নয়, তাতে আমার মতামতের কোনও পরিবর্তন হবে না। কারণ আমি দেখেছি তাকে পরিশ্রম করতে। যে সব বিষয়ে সে পারদর্শী নয়, সেগুলিও মন দিয়ে পড়ার ও মনে রাখার চেষ্টা করত সে। আমি তার অধ্যবসায়ের প্রশংসা করছি। কখনও বলবো না অসম্ভবকে সম্ভব করতে, বরং বলবো নিজের মতো করে নিজের মেধা দিয়ে এই বিরাট যুদ্ধ জয় করো।”

যেকোনো সময়ে পরীক্ষার ফলাফল বেরনোর দিন অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভুগতে থাকে পড়ুয়ারা। এই মানসিক চাপে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে দেখা গেছে বহু সন্তানকে। অভিভাবকদের অভিপ্রেত নম্বরের ঠেলায় কার্যত মানসিক অবসাদে জর্জরিত শৈশব। সন্তানদের এই অবসাদ থেকে বার করে আনতে পরে বাবা-মা ই। তাঁরাই পারেন কঠোর চাপ থেকে মুক্তি করে সন্তানের ঝলমলে দিনের জন্ম দিতে। পড়াশোনা করানোর চাপ থাকবেই তবে তা যেন কেবলমাত্র নম্বরের পার্সেন্টেজের মধ্যেই আবদ্ধ না থাকে। বন্দনার ফেসবুক পোস্টে  হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পড়লেও তিনি এসবের থেকে আরো অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তাঁর সন্তানের আগামী; অনেক উজ্জ্বল আলোর দিকে। 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*