অক্ষয় তৃতীয়া

তপন মল্লিক চৌধুরী –

অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি।এই শুভদিনে জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। বেদব্যাস ও গণেশ এই দিনে মহাভারত রচনা আরম্ভ করেন। এদিনই সত্য যুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়। এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। এইদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণ শুরু হয়। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে, এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।আধুনিককালে এই তিথিতে সোনার বা রূপার গয়না কেনা হয়। মনে করা হয়, এই শুভ তিথিতে রত্ন বা জিনিসপত্র কিনলে গৃহে শুভ যোগ হবে। সুখ-শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধি হবে, এই আশাতেই এদিন মানুষ কিছু না কিছু কিনে থাকেন।

অক্ষয় তৃতীয়ায় অনেক বাড়িতেই পুজো করা হয়।এই পুজোতে লাগে সিদুঁর, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগর্ব্য, তিল, হরিতকী, ফুল, দুর্ব্বা, তুলসি, বিল্বপত্র, ধূপ, প্রদীপ, ধূনা, মধুপর্ক বাটি ২, আসনাঙ্গুরীয় ২, দই, মধু, চিনি, ঘি, পুজোর জন্য কাপড় ১, শাটী ১, নৈবেদ্য ২,কুচো নৈবেদ্য ১, সভোজ্য জলপূর্ণ ঘট ১, বস্ত্র ১, পাখা ১, দক্ষিণা।

সংস্কৃত ভাষায়, অক্ষয়শব্দটি সমৃদ্ধি, প্রত্যাশা, আনন্দ, সাফল্য, ত্রিত্য অর্থ তৃতীয়,অর্থে অবিস্মরণীয়, চিরস্থায়ী, সর্বদা নিকৃষ্টতম।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*