খিদের জ্বালায় মাটির বিস্কুট খাচ্ছে মানুষ

তপন মল্লিক চৌধুরী

খিদের জ্বালায় মানুষ ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খাচ্ছে এমন দৃশ্য প্রায় কারোরই নজর এড়ায় নি। কিন্তু পেট ভরানোর তাড়নায় মানুষকে মাটি খেতে হচ্ছে এমন অভিঙ্গতা কারও আছে বলে জানা নেই। আমার আপনার জানা বোঝার বাইরে হলেও কিন্তু এমনটাই ঘটনা। সরাসরি মাটি নয় তবে খিদের জ্বালায় মাটির বিস্কুট খেয়ে পেট ভরাতে বাধ্য হয় মানুষ। অবাক হলেও পরিসংখ্যান বলছে, যে দুনিয়ার অসংখ্য মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পায় না সেই দুনিয়াতেই সারা বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি দামের খাবার নষ্ট করি আমরা। পৃথিবীর একপিঠের ছবিটা যখন এরকম তখন অন্য পিঠের মানুষ খিদে মেটানোর জন্য মাটির সঙ্গে নুন মিশিয়ে তা রোদে শুকিয়ে বিস্কুট বানিয়ে সংরক্ষণ করছে। প্রচণ্ড খিদের সময় সেই মাটির তৈরি অস্বাস্থ্যকর বিস্কুটই তাদের পেট ভরাচ্ছে।  

মধ্য আমেরিকার ক্যারিবিয়ান দেশ হাইতি- যেখানকার বেশিরভাগ মানুষের দৈনিক মাথাপিছু আয় দু’ ডলারেরও কম। সে দেশের মানুষের কাছে ফল-মূল কিংবা যে কোনও পুষ্টিকর খাবার হল স্বপ্ন। পেট ভরানোটাই যেখানে কষ্টসাধ্য কাজ সেখানে পুষ্টির জোগান আসবে কোথা থেকে? সে দেশের বিরাট সংখ্যক গরিব মানুষ তাই পেট ভরাতে খান মাটির বিস্কুট। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবারই পেট ভরায় বিশেষভাবে তৈরি ওই বিস্কুট। মাটির বিসুট হাইতিতে সহজলভ্য। বাজারের অন্য সব সামগ্রীর মতো এই বিস্কুটও বিক্রি হয় ঝুড়িভরে। বিশেষ করে হাইতির মধ্য প্লাতেও এলাকায় হলুদ মাটি দিয়েই তৈরি হয় এই বিস্কুট। দীর্ঘদিন ধরে সে দেশের গর্ভবতী মেয়েদের হলুদ মাটি খাওয়ানো হত। বলা হত এতে আছে ক্যালসিয়াম। সেই মাটির সঙ্গেই ভেজিটেবল তেল আর লবন মিশিয়ে তৈরি করা হয় একটি মসৃণ মিশ্রণ। সেই মিশ্রণ চামচের সাহায্যে পাতলা করে বিছিয়ে দেওয়া হয় গোলাকৃতিতে। তারপর শুকানো হয় কড়া রোদে। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলেই খাওয়ার উপযুক্ত হয় মাটির বিস্কুট। এতে কোনও পুষ্টিমান থাকুক আর না থাকুক পেট ভরাতে এর বিকল্প নেই। ওই মাটিতে ক্ষতিকর কোনও উপাদান আছে কি না,  খেলে শারীরিক কোনও সমস্যা হবে কি না; হাইতির হতদরিদ্র মানুষের এসব ভাবার অবকাশ নেই। যেভাবেই হোক না কেন পেট ভরাতে হবে।  

 মাটি খাওয়ার যে অনেক অপকারিতা আছে তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। মাটির সঙ্গে  মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে মাটিতে মিশে থাকা নানান ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ফলে এই বিস্কুট থেকে ঘটতে পারে ভীষন বিপদ। মুখে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মাটির বিস্কুট গলে যায় ঠিকইএকটা দীর্ঘসময় শরীরে বিশেষ করে জিবে একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি লেগে থাকে। অথচ ক্ষুধার জ্বালা আর পেট ভরানোর তাড়নায় সেই মাটিই নির্বিঘ্নে খেয়ে চলেছেন হাইতির দরিদ্র মানুষেরা। ভবিষ্যতে কী হবে না হবে তা ভাবলে তো আর পেট ভরবে না।

মাটির বিস্কুট তাই হাইতিতে একটি বহুল প্রচলিত খাবার। যদিও চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, এসব বিস্কুট খাওয়ার কারণে সেখানকার মানুষের অপুষ্টিজনিত রোগ হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? জীবন এখানে এতটাই নিষ্ঠুর, নির্মম যে ক্ষুধার্ত পেটে পূর্ণিমার চাঁদ যেমন ঝলসানো রুটি মনে হয় সেখানে মাটির বিস্কুট তো বাস্তবিকই পেট ভরায়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*