বিশ্ব জুড়ে ওয়্যারলেস ও মোবাইল যোগাযোগে অবদান রেখে যাওয়া ডঃ ভানু বসুর অকাল প্রয়াণ

বিশ্ব জুড়ে ওয়্যারলেস ও মোবাইল যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রেখে যাওয়া ডঃ ভানু বসু মাত্র ৫২ বছর বয়সে হঠাৎ মারা গেলেন। গত শনিবার মৃত্যু হয় তাঁর। ‘পালমোনারি এম্বোলিজম’ অর্থাৎ জমাট বাঁধা রক্ত বা অন্য কিছুতে ফুসফসের ধমনী রুদ্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
প্রত্যন্ত গ্রামে সেলফোনের নেটওয়ার্ক জোগানোর ক্ষেত্রে তাঁর উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাঁর সংস্থা হার্ডওয়্যার অভিনব কাজ করে চলেছে। তাঁর রেডিওভিত্তিক প্রযুক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ঝড়-বন্যা-ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিখোঁজ পরিজনদের সন্ধান পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তাঁরই জোগানো প্রযুক্তি বিনাখরচে ৪০টি কেন্দ্রে পুয়ার্তোরিকোর মারিয়া ঝড়ে বিপর্যস্ত, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানুষজনকে খুঁজে বার করার জন্য কাজ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের কাছে প্রথম স্বীকৃতি হিসাবে ডঃ ভানু বসুর প্রতিষ্ঠিত লেক্সিংটনের ভানু ইনকর্পোরেশনই হল সফটওয়্যার-ভিত্তিক রেডিও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রথম সংস্থা। তাঁর সংস্থার জোগানো প্রযুক্তির সাহায্যেই রোয়ান্ডার মত প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ৩৫০টিরও বেশি সেলুলার নেটওয়ার্ক কেন্দ্র চালু হয়েছে। ২০০৫ সালে ভানু হাত মেলান ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব টেলিম্যাটিক্স’-এর সঙ্গে ভারতের গ্রামাঞ্চলে মোবাইল ফোনের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্যে। টেলিযোগাযোগে উন্নতির লক্ষ্যে এটি ভারত সরকারের একটি সংস্থা।
ভানু বসু জন্ম সূত্রে মার্কিন নাগরিক। ঠাকুরদা ননীগোপাল বসু ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, ১৯২০ সালে আমেরিকা চলে আসেন। তাঁর বাবা অমরগোপাল বসুও ছিলেন প্রযুক্তিবিদ। যিনি ‘বোস কর্পোরেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বৈদ্যুতিক শব্দ-সরঞ্জামের বিশাল ব্যবসা গড়ে তোলেন। ২০০৭-এ বিশ্বের ২৭১তম ধনী হিসেবে ফোর্বস-এর তালিকায় জায়গা করে নেন। ভানু বসুর পড়াশোনা আমেরিকার বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি)। পরে এমআইটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। এমআইটি কর্পোরেশনের বোর্ড সদস্য ভানু আমেরিকার ‘আর্মি সায়েন্স বোর্ড’-এর সদস্য ছিলেন। কমিশনার হিসেবেও কাজ করছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’-এর সাথে। রোয়ান্ডা, পুয়ার্তোরিকো তথা ভারতবর্ষ, সকল প্রত্যন্তবাসীকে মোবাইল ফোনে জুড়ে দেওয়ার রাস্তা দেখিয়ে ভানু বসু অকালে চলে গেলেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*