পঞ্চব্যঞ্জন

অনুপ বৈরাগীঃ

স্বামী আর (ই)স্ত্রী দুজনেই চাকুরে হলে ইকোনমিক সিকিউরিটির দিক দিয়ে দু’পক্ষের ছ’পোয়া করে টোটাল পোয়া বারো। সহজ সমীকরণে প্রফেশনাল হ্যাজার্ডের সুখদুখের ভাগীদার দুজনে হওয়া যাবে এই আনন্দে প্রেমটা বেশ গদ গদ হয়।তারপর যখন ডাক্তার সিস্টার বা ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টাল চাকরির কোনএকটা নিয়তির সকৌতুকে জুটে যায়! অঙ্কের পোয়াবারো কখন পোয়াজিরো হয়ে যায় সে খেয়াল অধম আর অধমা অল্পদিনের মধ্যেই টের পায়। ধুর ধুর ! এরথেকে দশটা চারটের ডিউটি ঢের ভালো।একসাথে দিন শুরু ও শেষ অন্তত দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকদিন হয়ে গেলো….। আবেগের কুলুকুলু ভরা নদী বেগ হারিয়ে মরাস্রোতার অসহ্য সুড়সুড়ি হয়ে নিজের মতো বয়ে চলে….

দুদিন হলো আমাদের মুখ দেখাদেখি নেই। নাহ্ মশাই ঝগড়া ব্যাগড়া কিছু হয় নি। কখনো আমার শুরু তেনার শেষ কখনো ঠিক উল্টোটা । এই চক্করে উন্নাসিক হয়ে শুঁকে উৎকর্ণ হয়ে শুনে আর গোল গোল চোখে চেঁখে কিছু পদ পাকাতে শিখে গেছি। ভাত ডাল কিছু একটা সিদ্ধ হলেই দিব্যি চলে যায়। রাঁধতে ইচ্ছে না হলে ধনাদার ডাব্বা আর হাজি সাহেবের বিরিয়ানিই ভরসা। আর ইন্টারিম পে হিসেবে গিন্নীর চর্বচূষ্য মাঝে মাঝে জুটে গেলে তো কথাই নেই। আজ তৃতীয়দিনে একসাথে মধ্যাহ্ন ভোজের সূবর্ন সুযোগ পাওয়া গেলো। আবেগে কিছুটা লাগাম টেনে গিন্নীকে ফোন করলাম

হ্যালো

– বলছি আজ কি খাওয়া হবে ?

– বিরিয়ানি নিয়ে এসো( কথা বেশ ঝাঁঝালো)

– সারারাত জেগে বিরিয়ানি খেলে সিওর অম্বল( কাঁচুমাচু কেলেপাঁচু)

– তুমি একটা যা তা । পেট না অ্যাসিডের চেম্বার । তাহলে কিছু একটা সিদ্ধ বসিয়ে দাও।(বিরক্তির একশেষ)

– ঠিক আছে ।তুমি বেরিয়ে ফোন কোরো।

উপযাজক হয়ে দায়িত্ব নিয়ে বেশ মুষড়ে পড়েছি । আবার সেই কাটাকুটি , ধোয়াধুয়ি খুন্তি নিয়ে কুস্তি ! ভাল্লাগে না। কত করে বললাম মা! তুমি আর বাবা আমাদের সাথে থাকো। কাজের লোক থাকবে। শুধু তাকে একটু গাইড করা আর দুবেলা একটু গরম ভাত ! আহা ! ….সাড়ে পাঁচদিন আগের রান্না এবেলা ওবেলা ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করো আর খাও..গরম করো আর খাও। মুখটা ঠিক কোন সংখ্যার মতো হয়েছে বুঝতে পারলাম না।তবে কপালে যে পৌনে পাঁচটা ভাঁজ পড়েছে বেশ বুঝতে পারছি । অগত্যা ফ্রিজে কাঁচামাল বের করতে হাতলে টান দিলাম !

ফ্রিজের ভেতরে  কত কিছু  অপেক্ষা করছে সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা বেশ কষ্ট সাধ্য। বেগুন ভাজা ,সব্জি ডাল ,পমফ্রেট পোস্ত ,মাটন কষা ফ্রুট চাটনি আর উপরের থাকে একটা ইয়া বড়ো চকলেট কেক সাথে একবাটি ক্ষীরের পায়েস একসঙ্গে চেঁচিয়ে বললো সার….প্রা….ই…জ !

বাব্বা তলে তলে এতকিছু! আহা প্রতিদিন যদি বার্থ ডে হতো !!

টিং….. টং….. টিংটং টিংটং..

যাই ! বোধহয় তিনি ফিরলেন (দেরি হলে পুরো ভাইবা টেবিলের এপার ওপার হয়ে যাবে। কি দরকার খামোখা টেনশন নিয়ে।আই হেট টেনশন! )

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*