রাজ্যপালকে টুইটারে ব্লক করলেন ক্ষুব্ধ মমতা

পাল্টা টুইট করলেন রাজ্যপালও

রাজ্য –রাজপাল সংঘাত এবার আরও তীব্র। আরও কর্কশ হচ্ছে নবান্ন ও রাজভবনের সম্পর্ক। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল যে নিত্যদিন টুইট করে রাজ্য সরকারকে একের পর এক বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে, তাতেই অতিষ্ঠ হয়ে এই সিদ্ধান্ত। সেই কথা সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “আমি দুঃখিত এটি বলার জন্য, কিন্তু বাধ্য হয়েই করলাম।” এর আগে রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের চিত্র দেখেই বোঝা গিয়েছিল, রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্ক কোন তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী উভয়ের মধ্যেই এক হিমশীতল বাতাবরণ যে বিরাজ করছে, তা সেদিনেই দৃশ্য থেকেই অনেকে অনুমান করতে পেরেছিলেন।

সোমবার নবান্ন সভাগৃহের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিধানসভা চত্বরে দাঁড়িয়ে রাজ্যপালের মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না। এই নিয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ যা বলার বলেছেন। বিধানসভার পুরো এক্তিয়ার অধ্যক্ষের। সুতরাং, স্পিকারই এই বিষয়ে বলবেন।” আর এই বক্তব্যের পরেই কার্যত বোমা ফাটান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “তবে আমি বাধ্য হয়ে একটা কাজ করেছি। আমি দুঃখিত এর জন্য। এর জন্য আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। উনি প্রতিদিন একটি করে টুইট করেন। কখনও অফিসারদের গালাগালি দিয়ে, কখনও আমাকে গালিগালি দিয়ে… বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ তুলে, অসাংবিধানিক কথাবার্তা, অনৈতিক কথাবার্তা বলেন। আমাদের নির্দেশ দিতেন ওনার পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। পরামর্শ নয়, ওনার নির্দেশ অনুযায়ী চলতে বলতেন। তার মানে, আমরা ওনার চাকর-বাকর আর কি!”

মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণের সুর আরও চড়িয়ে প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কি বন্ডেড লেবার? আমরা নির্বাচিত সরকার হয়ে বন্ডেড লেবার! আর একটা কাউন্সিলরের কর্পোরট ইলেক্টেড না হয়েও, শুধুমাত্র নমিনেটেড হয়ে, তিনি হয়ে গিয়েছেন এখন সবার মাথার উপরে সুপার পাহাড়াদার। আমি বাধ্য হয়েছি, আজকে আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ওনাকে ব্লক করে দিতে কারণ, প্রতিদিন আমার বিরক্তি লাগত ওনার টুইটগুলি দেখে। যে কথাগুলি বলা উচিত নয়, যে কথাগুলি তিনি বলতেন, তা অমানবিক। এর জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমার কিছু করার নেই।

মমতা আরও বলেন, আমি অনেকদিন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। চার বার চিঠি লিখেছি। বার বার বলেছি। প্রতিদিন অফিসারদের ডেকে পাঠাচ্ছেন। এটা উনি পারেন না। উনি মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে পারেন। সরাসরি যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে আর সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি শুনেছি, আদালত থেকে শুরু করে আয়কর, ইডি থেকে শুরু করে সিবিআই, কাস্টমস থেকে শুরু করে কলকাতা সিপি, ডিসি, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব – সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে। উনি নিজেকে কী ভাবেন! বাংলার মানুষ মাথা নত করে চলে না।”

এদিকে মমতার এই ঘোষণার পরই সঙ্গে সঙ্গে টুইট রাজ্যপালের। স্বভাবসিদ্ধভাবে সংবিধানের ধারা তুলে বোঝালেন এভাবে রাজ্যপালকে ‘ব্লক’ করে দেওয়াকে সংবিধান সমর্থন করে না। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্রথম রাজ্য সরকারের উদ্দেশে রাজ্যপালের টুইট এবং সেখানে কাউকে ট্যাগ করা নেই। নিঃসন্দেহে এ ঘটনা নজিরবিহীন। সোমবার বিকেল ৪টে ২০ নাগাদ নবান্নে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি বাধ্য হয়েছি আজ ওনাকে আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করে দিতে। প্রতিদিন আমার ইরিটেশন হোত ওনার টুইটগুলো দেখে। যে কথাগুলো বলা উচিৎ নয়, এমন কথা বলতেন যা মানুষের পক্ষে মানবিক দিক থেকেও অমানবিক।”

https://twitter.com/jdhankhar1/status/1488123872633188354
https://twitter.com/jdhankhar1/status/1488113939741167619

এরপরই বিকেল ৫টা ৬ মিনিটে একটি টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি টুইটারে লেখেন, সাংবিধানিক রীতিনীতিকে ব্লক করা যায় না। ১৫৯ ধারা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, এই ধরনের ঘটনা ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী। আরেকটি টুইট করেন ৫টা ৪৫ মিনিটে। ভারতীয় সংবিধানের ১৬৭ ধারা তুলে ধরেন সেখানে। লেখেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ে রাজ্যপালকে জানানো মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কেন রাজ্য সরকার দু’ বছর ধরে সমস্ত তথ্য় ‘ব্লক’ করে রেখেছেন, জানতে চান রাজ্যপাল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*