স্কুলবেলা

স্কুল জীবন আমাদের সকলের কাছেই হারিয়ে যাওয়া নানা রঙের দিনগুলি। রোজদিন সকালে উঠে স্কুল যাওয়া Must । কড়া অনুশাসন মা’র। স্কুল কামাই কোনমতেই করা যাবে না। আমাদের মত সকাল ৬-২০তে প্রেয়ার লাইনে যাদের দাঁড়াতে হতো তাদের অবস্থা সত্যি ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। মনে হত কবে শেষ হবে এই স্কুলবেলা। কিন্তু আজ জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে এসে এটুকু বুঝি ঐ সময়টাই ছিলো Best part of the life। এ নিয়ে অবশ্য অনেকের ভিন্ন মত আছে। কথায় বলে Morning shows the day, প্রতিভা থাকলে তা বোঝা যায় স্কুল জীবনেই। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে অনেক। প্রখ্যাত আইনজীবি এবং কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বাল এর একটা কোটেশন এক্ষেত্রে প্রযোজ্য, “I have been writing poetry for a long time now, I started writings in my school days”।

অতএব বোঝাই যাচ্ছে স্কুলবেলা মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠ সময় বলে অনেকে না মানলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা রোজদিনে প্রতিদিন একজন মানুষের স্কুলবেলার কথা লিখব। আজকে বিশিষ্ট রূপ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিং ফ্লোরা।

শর্মিলা সিং ফ্লোরা

আমাদের স্কুলবেলা মানেই ছোট কুল, রাস্তার আচার, হজমি তেঁতুল। আমার স্কুলবেলা মানে স্কুল শেষে মায়ের কাছে বায়না, হেদোয় ফুচকা খাওয়ার বায়না। আমাদের স্কুল ব্যাগটা এত ভারী ছিল না। আমরা সেটা বইতে পারতাম।

উত্তর কলকাতার মিশনারী স্কুল বেথুন কলেজিয়েটে পড়তাম আমি। না এখনকার মত Admission Test, বাবা-মা’র Interview কিছুই দিতে হয়নি। এত Competition, এত Tension কিছুই ছিলো না সেই সময়। আমাদের স্কুলবেলা ছিলো রামধনু রঙে রাঙা। হাটখোলা দত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। রক্ষণশীল পরিবার। মা হাতে করে নিয়ে গিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। স্কুলে Discipline ছিলো; ছিলো Restrictionও। মনে পড়ে ইংরাজী পড়াতেন Mrs. Banerjee, কি সুন্দর তাঁর উচ্চারণ। খুব অল্প বয়সে স্কুল জীবনেই আমার বিয়ে হয়ে যায়। পরে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করি। আমাদের স্কুলের উল্টোদিকে ছিলো স্কটিশ চার্চ। এই স্কুলবেলাতেই উল্টোদিকের স্কটিশের ছেলেদের প্রতি চোরা টান থাকতো অনেক ছাত্রীরই। স্কটিশের ছেলেরাও বেথুনের মেয়েদের কখন ছুটি হবে অপেক্ষা করে বসে থাকতো। আমাদের স্কুল চত্ত্বরেই ছিলো অনেকগুলো সিনেমা হল। তবে স্কুল কেটে সিনেমা যাওয়া তখনও সাহস পাইনি। তবে সেই সময় একে একে Release করেছে ববি, জুলি। বাড়িতে না জানিয়ে বন্ধুদের সাথে লুকিয়ে সেই সব সিনেমা দেখেছি বৈকি।

আমাদের সময় বাড়ি থেকে এত টিফিন নিয়ে যাওয়ার ধুম ছিলো না। কখনও কখনও মায়েরা পয়সা দিতেন। কখনও কখনও স্কুলের ক্যান্টিন থেকে লুচি, মাছের চপ, ঢাকাই পরোটা খেতাম। আমাদের সময় পড়াশোনার এত চাপ ছিলো না। ৯০ শতাংশের উপর পেতেই হবে এ যে প্রচন্ড চাপ আমাদের ছেলে মেয়েদের ওপর, তা আমাদের সময় ছিলো না। Second Division পেলেই অনেক কিছু মনে করা হতো। এত Tuition, এত নম্বর, এত competition কিছুই ছিলো না। বাবা জানতেন না কোন ক্লাসে পড়ি। স্কুল জীবনটা আমরা আমাদের মত করে Enjoy করেছি। তবে শীতকালটা বড় দুঃখে কাটতো। আমাদের সময় শীতকাল মানেই তো Annual পরীক্ষা। সুতরাং লেপের তলায় শীত ঘুমের ১২টা বাজতো। এখনও কাজের সাথে যুক্ত আছি বলে শীতকালটা Enjoy করা হয়না। আশা রাখি Retire লাইফে শীতকালে ঘুমোবো।

আমাদের সরস্বতী পুজো ছিলো বছরভর অপেক্ষার দিন। বলতে পারেন আপনাদের এখনকার Valentine’s Day । আমাদের সময় পারিবারিক বন্ধন ছিলো খুব সুদৃঢ়। পরিবার বলতে আমরা মা-বাবা শুধু নয়। আত্মীয় স্বজন, মাসি, পিসি, পাড়া প্রতিবেশীকেও বুঝতাম।

আবারও বলি আমি মিস করি সেই হজমি ওয়ালাকে। আমার মনে পড়ে ভাই বোন বা বন্ধুদের চোখে কমলা লেবু খেয়ে তার খোসা চেপে দেওয়ার দুষ্টুমির কথা। আবার একটু বড় হলে সেই কমলা লেবুর খোসা বেটে তা মুখেও লাগিয়েছি।

আরেকটা কথা না বললে লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যায় তা হল আমাদের পুতুলের বিয়ের কথা। মোটামুটি মানুষের বিয়েতে যা যা হয় তাই আমরা করতাম পুতুলের বিয়েতে তবে একটু ছোট আকারের।সহপাঠীরা এখন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। আমিও ব্যস্ত আমার কাজে। সুজাতার সঙ্গে শুধু যোগাযোগ আছে। এখনতো Facebook, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পুরোনো বন্ধুদের ফিরে পাওয়া যায়। ওভাবেই যোগাযোগ আছে কারো কারোর সঙ্গে। তবে একথা বলবো আমাদের সময়ে জীবন আনেক সহজ-সরল ছিল। এত Frustration, এত Depression ছিলো না। স্কুল বেলায় ভালো রেজাল্ট না করে Suicide করার প্রবনতা আমাদের সময় ছিলো না। আমরা ৫০-৬০ শতাংশ নাম্বার পেলেই আমাদের বাবা-মায়েরা খুশি থাকতেন। আমাদের স্কুলবেলায় ছিলো গান, ছিলো জলসা, ছিলো থিয়েটার। অল্প কথায় বলা যায় আমাদের স্কুলবেলায় পরিবার ও স্কুলের বাঁধন শক্ত ছিলো ঠিকই, কিন্তু তার মধ্যেই আমরা দিনগুলোকে Enjoy করেছি খুব।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*