মুখ্যমন্ত্রীকে পত্রবোমা নির্বাচন কমিশনের

নন্দীগ্রামকাণ্ড নিয়ে এ বার সোজা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অত্যন্ত কড়া চিঠি দিলেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। দুর্ঘটনার পর তৃণমূল সুপ্রিমোর ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করে করা মন্তব্যের পাশাপাশি পরবর্তী ঘটনাক্রম ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জৈন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি লিখেছেন, “এমন মন্তব্য কেন করা হল তা তিনিই বলতে পারবেন।”

চার পাতার এই চিঠিতে ডেপুটি কমিশনার আরও লেখেন, “কমিশনকে খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” চিঠিতে ‘মাননীয়া ম্যাডাম’ কথাটি নিজের হাতেই লিখেছেন জৈন। তৃণমূলের যে সংসদীয় দল নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত নালিশ জানিয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গোটা ঘটনায় তদন্ত করে কমিশন ও রাজ্য প্রশাসন যে রিপোর্ট দিয়েছিল সেটার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। কেন রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা বিবেক সহায়কে কেন অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছে কমিশন।

মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়ে আরও সতর্কীকরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই কমিশন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছে এই ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন বলা চলে। কেননা, সোজা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে ‘কমিশনকে ছোট করার চেষ্টা হচ্ছে’ বলে যে কথা সুদীপ জৈন লিখেছেন, তার নজির ইতিপূর্বে নেই। উনিশেও কমিশন বনাম শাসকদলের টানাপড়েন চরম আকার ধারণ করেছিল।

তবে খোদ কমিশন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছে, অতীতে এই উদাহরণ নেই। এই চিঠিও এমন একটা সময়ে এসেছে যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মঙ্গলবারই বাঁকুড়ার এক জনসভা থেকে তৃণমূল নেত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “নির্বাচন কমিশনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, কে চালাচ্ছে এই কমিশন? আপনি চালাচ্ছেন না তো অমিত শাহ বাবু? হু ইজ অমিত শাহ। কমিশনের কাজে নাক গলাচ্ছেন। আমাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত চক্রান্ত করছেন। আমার নিরাপত্তা আধিকারিককেও (বিবেক সহায়) সরিয়ে দিয়েছে। ভোটের সময় সরকারি কর্তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। কী চায়, মেরে ফেলতে?” ওয়াকিবহাল মহলের মতে মমত বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পরই চুপ না থেকে এই পত্রবোমা নিক্ষেপ করেছে কমিশন।

কমিশন বস্তুত সাফ করে দিতে চেয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দলের অঙ্গুলিহেলনে নয়, নির্বাচন কমিশন নিজের অধিকার ও ক্ষমতার মধ্যে থেকেই কাজ করছে এবং কোনও রাজনৈতিক প্রভাব সেক্ষেত্রে নেই। কমিশনের সাফ বক্তব্য, কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দিতে চায় না কমিশন। তৃণমূলকেও যতবার চেয়েছে তাদের সময় দিয়েছে কমিশন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের বিশ্বাস চিরস্থায়ী করতে চাইছেন।”

কমিশনের এই চিঠির পর বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, এ বার মুখ্যমন্ত্রী-সহ বাকিদের নির্বাচন কমিশনের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*