ভিড়ে ঠাসা নজরুল মঞ্চে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থা

মাস দুয়েক আগে থেকেই শহর জুড়ে চলছিল উন্মাদনা কারণ তিলোত্তমার বুকে শো করতে আসছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ (কেকে)। পর পর দু’দিন নজরুল মঞ্চেই তাঁর শো। প্রথম দিনের চেয়েও দ্বিগুণ ভিড় ছিল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে। উন্মাদনাও ছিল তুঙ্গে। কে কে মাইক হাতে মঞ্চে উঠতেই কয়েক হাজার মানুষের উল্লাস শুরু হয়ে যায়। ঘণ্টা খানেকের অনুষ্ঠান। সুরের জাদুতে তখনও মগ্ন দর্শক।

ওই রেশ মেখেই বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। কেউ হয়ত তখনও বাড়িও পৌঁছননি। তার মধ্যেই দুসংবাদ। কয়েক মুহূর্ত আগেও যিনি  জাদুকণ্ঠের আবেশে সকলকে বশ করেছিলেন তিনি আর নেই। বিশ্বাস হচ্ছিল না। শুধু মনে মনে হয়ত ভাবছিলেন এটা মিথ্যে। কিন্তু সত্যিকে মিথ্যে করার সাধ্যি কার? তর্ক, লড়াই মিথ্যে করে ততক্ষণে হয়ত হিমঘরে পৌঁছে গিয়েছে তাঁর দেহ।

কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ (কেকে)-র মৃত্যু ঘিরে অজস্র প্রশ্ন যখন ঘোরাফেরা করছে সকলের মনে, ততক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো। এর মধ্যে একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে ভিড়ে ঠাসা নজরুল মঞ্চ। মঞ্চে তখন কেকে গান গাইছিলেন। আচমকা কয়েকজন সেখানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র চালিয়ে দিচ্ছেন। যা থেকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। তারপর ওই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।

নজরুল মঞ্চে প্রায় ২৭০০ আসন রয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তাদের কথা অনুযায়ী, ৭ হাজারের ওপর দর্শক এসেছিলেন মঙ্গলবার। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এয়ার কান্ডিশনার। গরমে হাঁসফাঁস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। বেশ কয়েকটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে বার বার ব্রেক নিচ্ছিলেন কে কে। মাঝে মধ্যেই রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতেও দেখা যাচ্ছিল। বার কয়েক জলও খেয়েছিলেন। নিভিয়ে দিতে বলেছিলেন হলের সমস্ত আলো।

অনুষ্ঠান চলতে চলতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কে কে। ব্যাকস্টেজে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রামও নেন। তারপর আবার ফিরে আসেন মঞ্চে। শেষে আরও অসুস্থ বোধ করায় দ্রুত শিল্পীকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।হোটেল থেকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

প্রশ্ন উঠেছে, এরকম পরিস্থিতে ভিড় কমানোর জন্যই কি চালানো হয়েছিল অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র? কিন্তু এভাবে কি ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যায় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র?  ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা ঘিরে। অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা Fire extinguisher নিয়ে রীতিমতো খেলা করছিলেন। এব্যাপারে অবশ্য তাঁদের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*