বেনজির পদক্ষেপ! বিচারকের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়েই প্রশ্ন বিচারপতির, দিলেন বদলির নির্দেশ

যে বিচারক ইডি-সিবিআইয়ের ভুল ধরছিলেন তাঁকে সরিয়ে দিতে চাইছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! আলিপুরের বিশেষ CBI আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে আগামী ৪ অক্টোবরের মধ্যে বদলির নির্দেশ দিলেন বিচারপতি। শুধু তাই নয়, বিচারকের মাথায় কার হাত- তা নিয়ে এজলাসে বসেই প্রশ্ন তুললেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অর্থাৎ বিচারক তথা বিচারব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন। বেনজির পদক্ষেপ বিচারপতির। নির্দেশ দিলেন, আপাতত নিয়োগ মামলা নিয়ে কোনও শুনানি করতে পারবেন না বিচারক চট্টোপাধ্যায়। বদলির নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে বদলি করা হয়নি? প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। এমনকী আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককেও হাই কোর্টে ডেকে পাঠান তিনি। জানতে চান, কোন স্বার্থে বিচারককে বদলি করা হয়নি?

বুধবার, প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় কলকাতা হাই কোর্টে হাজিরা দেন সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দলের (SIT) প্রধান অশ্বিন শেণভি। সিটের আধিকারিকদের ‘পুলিশি হেনস্থা’র মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এই অভিযোগ শোনার পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, সিটের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না কলকাতা বা রাজ্য পুলিশ। মুখ্যসচিবের মাধ্যমে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও আনতে চান অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এককথায় রক্ষাকবচ পেলেন সিটের সদস্যরা। অথচ একসময় এই সিট নিয়েই অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি। সেইসময় এই বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এদিন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁদের যেন টাচ না করা হয়। দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপোস নয়।’’ তাঁর প্রশ্ন, ২৫ অগাস্ট বদলির নির্দেশের পরেও অপর্ণ চট্টোপাধ্যায় এখনও কেন আলিপুর কোর্টে? আইনমন্ত্রীকেও ডেকে পাঠান বিচারপতি। সেই মতো হাইকোর্টে যান মলয় ঘটক। ৪ অগাস্টের মধ্যে বদলি করতে বলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আইনমন্ত্রী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন।

এর পরেই আলিপুরের আদালতের বিচারক অপর্ণ চট্টোপাধ্যায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই হাই কোর্টের অর্ডারে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় সিবিআই বিচারকের। শুনেছি, বিচারক অপর্ণ চট্টোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তাঁর মাথায় কারও হাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।’’ এরপর নিজেই বিচারক চট্টোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ দেন বিচারপতি গাঙ্গোপাধ্যায়। ৪ অক্টোবরের মধ্যে বিচারককে বদলি করাতে হবে। নির্দেশ পালন হল কি না, হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারকে সে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। এর পাশাপাশি বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি নির্দেশ দিচ্ছি, বিচারক চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতির আর কোনও মামলা শুনতে পারবে না।’’

এরপরেই বিভিন্ন মহলে এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিচারকের বিরুদ্ধে বিচারপতির পদক্ষেপ, আইন ব্যবস্থায় নজিরবিহীন। আদালতই সাধারণ মানুষের শেষ ভরসা। সেই বিশ্বাস-ভরসার জায়গাটি টলিয়ে দিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি। তাঁর বিস্ময়কর মন্তব্য, বিচারকের মাথায় কার হাত রয়েছে? অর্থাৎ বিচারপতি কোর্টে দাঁড়িয়ে বিচারক বা বিচার ব্যবস্থার প্রতিই অনাস্থা প্রকাশ করলেন। বিচারক বা বিচারপতির মাথাতেও কারওর হাত থাকতে পারে, এবং সেই হাতের সৌজন্যেই তিনি রায়দান করেন? বিস্ফোরক মন্তব্য। আইনিমহলের প্রশ্ন, এটা কি আদালত অবমাননা নয়? যেখানে আদালতের বিচারক, বিচারপতি বা তাঁদের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুললে- সেটা আদালত অবমাননার সামিল হয়, সেখানে একজন বিচারপতি কীভাবে এজলাসে বসে আরেকজন বিচারকের বিশ্বাসযোগ্যতা, বিচারব্যবস্থার বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন!

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*