শেষ হলো গুজরাট ভোট, বিজেপি এগিয়ে থাকলেও বিগত বছরের তুলনায় ভালো ফল কংগ্রেসের

যুদ্ধের অবসান। শেষ হলো গুজরাট ভোট। না, যুদ্ধের শেষ বললে ভুল হবে। বলা ভালো ১৮ ডিসেম্বর অর্থাৎ আগামী সপ্তাহের সোমবারের পর থেকে শুরু হতে চলেছে এক নতুন যুদ্ধ। গুজরাট নির্বাচনে সাধারন মানুষের রায় কোন দিকে যায়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। বিজেপির খাসতালুক হলেও চলতি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পাখির চোখ করেছিল গুজরাটকে। একটু ভালো ফলের আশায় মাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন সদ্য কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়া রাহুল গান্ধী। প্রচার থেকে শুরু করে, কর্মীসভা, সাধারন মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো সবই করতে দেখা গিয়েছে সোনিয়া তনয়কে। এমনকি গুজরাটে গিয়ে গেরুয়া বাহিনীর সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ সেই পতিদার অনামত আন্দোলন সমিতির নেতা হার্দিক প্যাটেলকে পাশে নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন।

মূলত, কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিল ইস্যু ও জিএসটির জেরে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছে সাধারন মানুষ। আর সেই ইস্যুকে একেবারে হাতছাড়া করতে চায়নি বিরোধী শিবির। তাই প্রথম থেকেই বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূর্গ গুজরাটে থাবা বসাতে চেয়েছিল কংগ্রেস। কেন্দ্রের সেই ব্যর্থতা গুলোকে তুলে ধরেই প্রচারে ঝড় তুলেছেন রাহুল, হার্দিক, অল্পেশ, জিগনেশরা। তারা জানত যে গুজরাটে বিজেপি বড়ো ফ্যাক্টর, তা সত্বেও নিজেদের জমি শক্ত করতে একের পর এক ঝড় কড়া হাতে সামলেছেন বিরোধী দলনেতারা। ভোটের আগে সমীক্ষায় করে দেখা যায় গতবছরে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি দল সাধারন মানুষকে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার বেশীরভাগটাই বাস্তবায়িত হয়নি। বিরোধীদের দাবি বিজেপি সাধারন মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছে। গুজরাটের মানুষ চাকরির দাবি করে আসছিল, তাদের চাকরি দেওয়ার কথা বলা হলেও কিছুই হয়নি। ভোটের আগে তারা যে অবস্থায় ছিল, ভোটের পরেও তাদের অবস্থানের এতটুকু নড়চড় হয়নি। তাই চলতি ভোটে এই সমস্ত অস্ত্র হাতে পেয়ে ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন বিরোধীরা। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেয়নি। দাঁতে দাঁত চেপে শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছে বিরোধী দল গুলি।

প্রসঙ্গত, বর্তমান ভোটে লড়াই মূলত ২টি হেভিওয়েট দলের মধ্যে। বিজেপি ও কংগ্রেস। একে শুধু মোদী ও রাহুলের দ্বৈরথ বললেও ভূল হবে না। ভোটের আগে থেকেই এই দুই হেভিওয়েটের তরজায় সরগরম হয়েছিল দেশের রাজনীতি। তা এখনও চলছে এবং ভোটের ফলাফল ঘোষনা হওয়ার পরও তা চলবে একথা পরিষ্কার ভাবেই বলা যায়। রাহুল গান্ধী অবশ্য চলতি বছরে গুজরাট ভোটে ভালো ফলের আশা করছেন। নির্বাচন নিয়ে গত কয়েকদিনেও জলঘোলা কম হলো না। শেষদিনেও মোদীর রোড শো নিয়েও ডামাডোল কম হলো না। কিভাবে নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে মোদী রোড শো করলেন তা নিয়ে শুরু হয় বিস্তর জল্পনা। নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে কংগ্রেসের কর্মী, সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।

এদিন ভোটের পরপরই বুথ ফেরৎ সমীক্ষা প্রকাশ করে বিভিন্ন সংস্থা। সেখানে দেখা যাচ্ছে গুজরাট ভোটে কংগ্রেস বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভালো ফল করলেও আসলে জয় হয়েছে বিজেপিরই।

এখন একনজরে কয়েকটি বিশেষ সংস্থার বুথ ফেরৎ সমীক্ষার দিকে নজর রাখা যাকঃ

· এবিপি নিউজের গুজরাট সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ১১০

কংগ্রেস- ৭১

অনান্য- ১

· ইন্ডিয়া টুডের গুজরাট সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ১০৭

কংগ্রেস- ৭৪

অনান্য- ১

· টাইমস অফ ইন্ডিয়ার গুজরাট সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ১১১

কংগ্রেস- ৭১

· ফাইনাল টাইমসের গুজরাট সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ১১৩

কংগ্রেস- ৬৬

অনান্য- ৩

· টাইমস নাওয়ের গুজরাট সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ১১৫

কংগ্রেস- ৬৪

অনান্য- ৪

· এনডিটিভির গুজরাট সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ১১২

কংগ্রেস- ৭০

· আজতকের গুজরাট সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ৯৩_১১৩

কংগ্রেস- ৬৮_৮২

· চাণক্যর গুজরাট সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ৪৯%

কংগ্রেস- ৩৮%

অনান্য- ১৩%

· ইন্ডিয়া টুডের হিমাচলপ্রদেশ সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ৫১%

কংগ্রেস-১৬%

অনান্য- ১%

· এবিপি নিউজের হিমাচলপ্রদেশ সমীক্ষাঃ

বিজেপি- ৩৮%

কংগ্রেস- ২৯%

অনান্য- ১%

প্রসঙ্গত, গুজরাটে সরকার গড়তে ৯২টি আসনের প্রয়োজন। ১৮ ই ডিসেম্বর ফল ঘোষনা। সোমবার গুজরাট ও হিমাচলপ্রদেশ দুই রাজ্যেরই ভোটের ফলাফল ঘোষনা হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*