মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ একনাথ শিণ্ডের

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন একনাথ শিণ্ডে৷ উদ্ধব ঠাকরের পর শিবসেনার দ্বিতীয় নেতা হিসেবে শিণ্ডে বসলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে৷ বৃহস্পতিবার সন্ধে ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ রাজভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি৷ অন্যদিকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীস৷ শপথ নেওয়ার পরই দু’জনকে টুইটে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ একনাথ শিণ্ডেকে ‘তৃণমূল স্তরের নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী৷

আবেগের নাম বালাসাহেব। ভালোবাসার ডাক ঠাকরে। আর সেই আবেগ-ভালোবাসাকে পাথেয় করে উদ্ধবের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু একনাথ শিণ্ডের। উদ্ধব ঠাকরের হাত থেকে বেরিয়ে এসে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সেই বালাসাহেব ঠাকরেকেই আঁকড়ে ধরলেন শিণ্ডে। শপথ নিয়েই নিজের টুইটারের ছবি পরিবর্তন করে ফেললেন শিণ্ডে। মারাঠিদের আবেগের বালাসাহেবের পায়ের তলায় বসে শিণ্ডে বুঝিয়ে দিলেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে, উদ্ধব-আদিত্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাঁর হাতিয়ার বালাসাহেবই।

বিদ্রোহের প্রথম দিন থেকেই একনাথ শিণ্ডে অভিযোগ তুলেছিলেন, উদ্ধব ঠাকরে বা আদিত্য ঠাকরেরা বালাসাহেবের আদর্শ থেকে সরে গিয়েছেন। তাঁরা হিন্দুত্বের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তাঁর সে দিন অভিযোগ ছিল, শিবসেনার আর্দশ থেকে সরে আসা উদ্ধবদের সঙ্গে কাজ করা যাচ্ছে না। আর সে জন্যই সরে আসতে চাইছেন।

বৃহস্পতির সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে বালাসাহেবের সঙ্গে ছবি দিয়ে শিণ্ডে বুঝিয়ে দিলেন, মারাঠি ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি কতটা মরিয়া। একই সঙ্গে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন, উদ্ধব নন, আসল শিবসেনা তিনিই। ক্ষমতার লড়াইয়ে আদিত্যর হাতে চলে যাওয়া শিবসেনার রাশ নিজের হাতে আনতে এ-এক নতুন লড়াই শুরু করে দিলেন একনাথ শিণ্ডে।

অন্যদিকে, দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা এই সরকারের সম্পদ বলে মন্তব্য করেন মোদি৷ প্রধানমন্ত্রীর মতোই একনাথ শিণ্ডে এবং দেবেন্দ্র ফড়ণবীসকে শুভেচ্ছা জানান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও৷

দু’দশকেরও প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত। বরাবরই প্রচারের আলো থেকেও দূরে থাকতে ভালোবাসেন। চারবারের বিধায়ক। সামলেছেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে একসময় অটোও চালিয়েছিলেন। ৫৮ বছরের সেই একনাথ শিণ্ডেই এবার বসছেন মহারাষ্ট্রের কুর্সিতে। রাজনৈতিক গুরু আনন্দ দীঘে মৃত্যুর পর থানেতে শিবসেনার খুঁটি শক্ত করতে শিণ্ডের বড় ভূমিকা ছিল।

১৯৬৪ সালে সাতারাতে জন্ম একনাথের। একাদশ শ্রেণির পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। ১৯৮০ সালে বালাসাহেব ঠাকরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিবসেনা যোগ দেন। সেই সময় একাধিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন একনাথ। ৪০ দিন জেলও খাটেন শিণ্ডে। একদা থানে শহরের অটো ড্রাইভার শিণ্ডে ধীরে ধীরে দলে পরিচিতি লাভ করতে থাকেন। শীর্ষ নেতৃত্বের নজরেও আসেন। ১৯৯৭ সালে থানে পুরনিগমের কর্পোরেটর পদে বড় ব্যবধানে জয় পান।

২০০১ সালে থানে পুরনিগমের দলনেতা হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৪ অবধি ওই পদে ছিলেন শিণ্ডে। ২০০৪ সালে বিধানসভার টিকিট পান। বড় ব্যবধানে জেতেন সেবার। তার পর ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালেও জেতেন ওই কেন্দ্র থেকেই। ২০১৯ সালে মহাবিকাশ আঘাডী সরকারের নগরোন্নয়ন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী হন একনাথ। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বিধান পরিষদের সদস্য হওয়ায় বিধানসভার দলনেতার দায়িত্ব পান শিন্ডে।

এর আগে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার দায়িত্বও পালন করেছেন শিণ্ডে। ২০১৪ সালে বিজেপি-শিবসেনা জোট সরকারের মন্ত্রীও হন। আচমকা কী কারণে শিণ্ডে বিদ্রোহী হলেন, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে চমক রয়েছে অন্য জায়গায়। যেই শিণ্ডে সম্প্রতি উদ্ধবের ছেলে তথা রাজ্যের মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরের সঙ্গে অযোধ্যা সফরেও গিয়েছিলেন, সেই শিণ্ডের চালেই কিস্তিমাত হলেন উদ্ধব।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*