কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করে অসমে আত্মঘাতী বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎ মজুমদার

মাসানুর রহমান,

অসমের নগাঁওতে হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের হস্টেলে থাকতেন কারখানার ইউটিলিটি অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার বিশ্বজিৎ মজুমদার। শনিবার থেকে তাঁকে অফিসে যেতে দেখেননি সহকর্মীরা। অবশেষে হস্টেলের সেই ছোট্ট ঘরে মিলল বিশ্বজিত মজুমদারের রেখে যাওয়া শেষ নোট। যে নোটে লেখা ছিল, ‘‘আমি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার।’’ আর ঠিক তাঁর মৃত্যুর দু’দিন পরই সরকারের তরফে তাঁর কোম্পানি হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশন লিকুইডেশনে বিশ্বজিতের চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হল। মঙ্গলবার বিকেলে হস্টেলের রুম থেকেই উদ্ধার করা হয় তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ।

ঘটনাসূত্রে জানা যায় গত ২৬-২৭ মাস ধরে বেতন পাচ্ছিলেন নাএইচপিসির নগাঁও ও কাছাড় কলের কর্মীরা। এই নিয়ে নগাঁওয়ে তিন জন আত্মঘাতী হলেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৩১ জনের। কাছাড় ও নগাঁওয়ের দুই কারখানা মিলিয়ে আত্মহত্যা এবং বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫।
গত রবিবার থেকে কলকাতায় থাকা স্ত্রী এবং দিল্লি ও কেরলে পাঠরত দুই মেয়ের ফোনও ধরছিলেন না বিশ্বজিতবাবু এমনটাই জানিয়েছে তাঁর পরিবারবর্গ।

কাছাড়ের পাঁচগ্রাম কাগজকলে নিযুক্ত বিশ্বজিৎবাবু ২০১১ থেকে নগাঁওয়ের জাগি রোড কারখানায় যোগ দেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি কালনায় হলেও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎবাবু সপরিবারে কলকাতার বেলগাছিয়ায় থাকতেন। স্ত্রী শিক্ষিকা। যমজ মেয়ে। এক কন্যা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্বে এমফিল ও অন্য জন কেরলে জিনতত্ত্বে গবেষণা করছেন। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে কারখানা ও বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সঞ্চয় ভেঙে চালাতে হচ্ছিল তাঁকে। তবুও তীব্র অর্থসঙ্কটের আঁচ পরিবারে পড়তে দেননি।

তাঁর এক সহকর্মী জানান, দিন কয়েক আগে শেষ বিমার সঞ্চয়ও ভেঙে ফেলে আক্ষেপ করেছিলেন, আর কোনও সঞ্চয় থাকল না। পুলিশের সন্দেহ, সেই হতাশা থেকেই চরম সিদ্ধান্ত নেন ৫৫ বছরের বিশ্বজিৎবাবু। খবর পেয়েই স্ত্রী মণিদীপা মজুমদার, শ্যালক ভাস্কর মৈত্র ও মেয়েরা গতকাল সকালেই মরিগাঁওয়ের হাসপাতালে যান। সেখানেই মৃত বিশ্বজিতবাবুকে দেখেন তাঁরা। গুয়াহাটিতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*