পুরসভার শিক্ষা বিভাগের প্রয়োজনে অর্থের অভাব হবে নাঃ মেয়র

কলকাতা পুরসভার সমস্ত পুরপ্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শীক্ষার্থীদের ৩৬তম বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অন্তিম পর্ব অনুষ্ঠির হলো ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ বৃহস্পতিবার, দেশপ্রিয় পার্কে। কয়েক হাজার পড়ুয়ার কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছিল ময়দান প্রাঙ্গণ। অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন মেয়র পারিষদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, দেবাশিষ কুমার, তারক সিং, বরো চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, পৌরসচিব হরিপ্রসাদ মন্ডল ও যুগ্ম পৌর মহাধক্ষ্য তাপস চৌধুরী। ১১.৪৫ মিনিটে পতাকা উত্তোলন ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। পুরপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাতে জলন্ত মশাল তুলে দিয়ে তাঁলে অভিবাদন জানায়। এদিনের অনুষ্ঠানে মেয়র জানান, ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু কলকাতা পুরসভার দায়িত্বে থাকার সময় প্রথম অনুভব করেন পুরপরিসেবার মধ্যে শিক্ষা বিভাগ থাকবে। তবে ৮-৯ বছর আগেও অভিভাবকরা পুরবিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠাতেন না। স্কুলগুলির জরাজীর্ণ অবস্থা ও দুর্বল পরিকাঠামো এর জন্য দায়ী ছিল। এখন সময় বদলেছে। কলকাতা পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড ঝাঁ চকচকে, পুর-স্কুল্গুলিতে প্রচুর সংখ্যক পড়ুয়ার ভিড় চোখে পড়ে। বই-খাতা-পেন-জুতো-ব্যাগ-টিফিন বক্স থেকে শুরু করে শীতের বস্ত্র পর্যন্ত আমরা দিচ্ছি।’

প্রসঙ্গত কলকাতা পৌরসংস্থার শিক্ষা বিভাগ প্রতিটি শিশুর বিশেষ করে সমাজের অনুন্নত তথা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্ব্ল পরিবার থেকে আগত শিশুদের শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে ১৩৫টি বাংলা মাধ্যম, ৪৫টি হিন্দি মাধ্যম, ৫৮টি উর্দু মাধ্যম, ইংরেজী মাধ্যম ১৭টি এবং ১টি ওড়িয়া মাধ্যম প্রাথমিক বিদ্যালয় সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করছে। এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা সুনিশ্চিত করতে পৌরসংস্থার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫টি জুনিয়র হাইস্কুল খোলা হয়েছে। উন্নততর শিক্ষাদানের জন্য ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি করা সহ কম্পিউটার শিক্ষা ও কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টিকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও কলকাতা পৌরসংস্থার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ২০টি বিদ্যালয়ে মন্টেসরি সেশন রয়েছে। পৌর বিদ্যালয় ছাড়াও কলকাতা পৌরসংস্থার বিভিন্ন ওয়ার্ডে শিশুশিক্ষা কর্মসূচীর অন্তর্গত ১০৪টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। মন্টেসতি সেশনে ৩ বছরের উর্দ্ধে শিশুদের জন্মের নথিপত্র দেখে ভর্তি নেওয়া হয়। প্রিপ্রাইমারীতে ভর্তির বয়স ৫ বছর। শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় জানুয়ারী থেকে। শেষ ডিসেম্বরে। পুরো শিক্ষাবর্ষে প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব ও তৃতীয় পর্ব হিসাবে মোট তিনবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রথম পর্ব হয় এপ্রিল মাসে। দ্বিতিয় পর্ব পরীক্ষা হয় আগস্ট মাসে। তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা হয় ডিসেম্বর মাসে। পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে রেমিডিয়াল টিচিং এর ব্যবস্থা করা হয় ও পরবর্তী ক্লাসের যোগ্য করে তোলা হয়।

সকল শিশুর জন্য শিক্ষাগ্রহণ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে নিয়মিত ভর্তিকরণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। কলকাতা পৌরসংস্থার শিক্ষা বিভাগের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নতুন শিশুদের ভর্তি সহ বিদ্যালয়ছুট শিশুদের বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করানোর প্রয়াস জারি হয়েছে। বিদ্যালয়ে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে এবং বিদ্যালয় পরিচালন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা মেটাতে প্রতিটি বিদ্যালয় সংলগ্ন শিশুদের মেয়দের নিয়ে সভা (মাদারস মিটিং) ও বিদ্যালয় উন্নয়নের কমিটির সভার নিয়মিত আয়োজন করা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের নাচ, গান, আবৃত্তি প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও অভ্যাস করানো হয়। কলকাতা পৌরসংস্থা আয়োজিত স্বাধিনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, রবীন্দ্র জয়ন্তী সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*