সংকট সামাল দিতে কার্যত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি কলকাতা পুরসভায়, শর্তসাপেক্ষে মিলবে বরাদ্দ টাকা

প্রবল অর্থসংকটের জেরে বাজেট পাস করেও ওয়ার্ড পিছু উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবর্ষের খরচের মাত্রা ও পরিমাণ বেঁধে দিল কলকাতা পুরসভা। পুরকমিশনার বিনোদ কুমারের জারি করা সার্কুলার মেনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ২০২২-২৩ বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের উপরে কার্যত ‘এমবার্গো’ ঘোষণা করল পুর প্রশাসন। সার্কুলারে বলা হয়েছে, পুরসম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (কোড নং-৪০০) এবং নয়া প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী সম্পদ (কোড নং-৮০০) তৈরির জন্য কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডপিছু যে অর্থ বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে, তার মধ্যে ৬০ শতাংশ টাকার প্রাথমিক অনুমোদন কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। বাকি ৪০ শতাংশ টাকা আপাতত কোষাগারেই থাকবে।

বরাদ্দকৃত ৬০ শতাংশ টাকায় বিভাগীয় কাজগুলি সম্পাদন করে তার যাবতীয় নথি জমা দিলেই বাকি টাকা পরবর্তী ধাপে অনুমোদন দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “কারও টাকা আটকানো হচ্ছে না। প্রথম দফায় প্রকল্প বাবদ ৬০ শতাংশ খরচ করে ইউটিলাইজেশন। সার্টিফিকেট দিলেই পরের টাকার অনুমোদন দেওয়া হবে। অর্থের অপচয় বন্ধে ধাপে ধাপে খরচ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

পরপর দু’বছর করোনা অতিমারীর ধাক্কায় নাগরিক পরিষেবা চালু রাখলেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জোর ধাক্কা খেয়েছে পুরসভা। তিন মাস আগে নতুন পুরবোর্ড আসতেই আগামী অর্থবর্ষে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন পুরকর্তারা। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূর্ণ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন পুর প্রশাসন বরাদ্দ বাজেট ‘দেখে শুনে’ খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বস্তুত এই কারণে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচের উপরে কার্যত ‘এমবার্গো’ জারি করল পুরসভা।

সূত্রের খবর, দ্বিতীয় দফায় ৪০ শতাংশ টাকা পরবর্তীতে কোষাগারের অবস্থা বুঝেই অনুমোদন দেবে। বিগত আর্থিক বছরগুলিতে মেয়র ও বরোর ফান্ডের উপর আলাদা করে নানা সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হত। কিন্তু এবছর দু’টি কোডের (৪০০/৮০০) আওতায় সমস্ত ফান্ড নিয়ে এসে আর্থিক সংকট মেটাতে ৬০ শতাংশ ‘এমবার্গো’ জারি করা হল। এবার বাজেটে ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ৪ হাজার ২৩৩ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪১০ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। বাজেট ঘাটতি ১৭৭ কোটি টাকা।

পুরসভা সূত্রে খবর, গত তিন-চার বছর আগেও বাজেটে বরাদ্দ অর্থের ১০০ শতাংশ খরচের উপরে ছাড়পত্র দেওয়া হত। কিন্তু পরবর্তী আর্থিক বর্ষে আয়-ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি অনেকটাই বেড়ে যেত। যা নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হত অর্থবিভাগের আধিকারিকদের। পুরসভা সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে পুরসভার রাজস্ব আদায়ের মূল স্তম্ভগুলি থেকে টাকা আদায় কমে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে নজর না রাখলে বছরের শেষে প্রকল্পের জন্য টাকার জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যার জেরে মাঝপথে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। বস্তুত এই কারণে এবার নয়া অর্থবছর শুরু হওয়ার আগেই অর্থসংকট সামাল দিতে ‘এমবার্গো’ জারি করলেন পুর কমিশনার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*