গল্প স্বল্প- “বিদায়”

কৃষ্ণকলি

বরাবরই উইন্ডো সিট পছন্দ তিতির-এর। একটু আগে এয়ারপোর্টে এসে যায় তাই। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও ভিড় ঠেলে প্লেনে ওঠা না পসন্দ তিতির-এর। তাই সবার শেষেই প্লেনে ওঠে সে। মুম্বইয়ে এক নামকরা ব্যাংকের উচ্চপদে আছে তিতির। পুজো উপলক্ষে বাড়ি ফিরছে।

হাতের লাগেজ কেবিনে রেখে বসতে যাবে, হঠাৎ যেন একটা ঝাঁকুনি খেলো। না প্লেন টেক অফ করেনি। যাকে জীবনে কোনদিন দেখতে চায়নি, সেই শুভ্র পাশের সিটে। আর ওর পাশে কে? নিশ্চয়ই ওর বৌ। শুনেছে যে, শুভ্র আবার বিয়ে করেছে। ঘেন্নায় গা রিরি করে উঠলো। কম অত্যাচার তো করেনি শুভ্র তিতিরকে। অহেতুক সন্দেহ, মারধোর। অথচ অভীকের সঙ্গে তিতিরের বন্ধুত্ব ছাড়া কিছুই ছিলোনা। শুভ্র এমনই মনটা বিষিয়ে দিয়েছিলো তার, যে আবার বিয়ের কথা ভাবতে পারেনা তিতির। শুভ্র ও যেন কেমন চুপচাপ। কাঁপা গলায় বললো কেমন আছো তিতির?

দাপুটে শুভ্রর এটা কি অভিনয়? ও সব পারে। বিরক্তি সহকারে তিতির বলে খুব ভালো। আমি ভালো নেই বলে শুভ্র। কেন এই তো দেখছি সুন্দরী বৌ। বাচ্চাও হয়েছে নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, তা হয়েছে। কিন্তু আমি তো চলে যাচ্ছি। কোথায় বিদেশে? তা বৌ ছেলেকে নিয়ে যাও। না সেখানে একা যেতে হয়। তিতিরকে কিছু বলতে না দিয়ে শুভ্র বলে চলে, আমার বোন ক্যান্সার। অ্যাডভান্স স্টেজ। তাই বম্বে আসা। এবার ওরা জবাব দিয়েছে। পুজোর দিনগুলো কাটে কিনা ঠিক নেই। ঝাপসা হয়ে যায় চারদিক। এই প্রথম শুভ্রর জন্য চোখে জল এলো তিতিরের।

প্লেন ল্যান্ড করলো কলকাতায়। শুভ্র দাপুটে গলায় বললো বিদায়। অস্ফুটে তিতির বলে বিদায়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*