আক্রান্ত সাংবাদিক, প্ররোচনা নেই তো!

পিয়ালি আচার্যঃ

গণতন্ত্রের চতুর্থ মাধ্যম বলা হয় সংবাদ মাধ্যমকে। নিরপেক্ষতা তার অন্যতম শর্ত। এখন কি এই প্রশ্ন তোলাই যায় মানুষকি সত্যিই নিরপেক্ষ হতে পারে? বিশেষ করে এই প্রবল বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় নিরপেক্ষ থাকা কতটা সম্ভব। সংবাদ পত্র বা বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম চালাতে প্রচুর খরচ হয়। কোটির অঙ্কে অর্থ ব্যয় হয়। সুতরাং বড় করে শিল্পপতি বা বিত্তশালী ব্যক্তি বা সংস্থা বা কোনও রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিনিয়োগে চলে সংবাদ মাধ্যমগুলি। সুতরাং কর্তার ইচ্ছায় কর্ম করতে হয়। তবে আমার দীর্ঘ দু’দশকের বেশি সাংবাদিক জীবনের অভিজ্ঞতা বলতে পারি, কিছু সাংবাদিক হাউস পলিসির শিরোধার্য্য করতে এবং কর্তৃপক্ষের চাটুকারিতা করতে বড্ড বেশি মাথা নুইয়ে ফেলেন । এটাও যেমন বাঞ্ছনীয় নয়, তেমনি সাংবাদিকের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পরিচয় থাকতেই পারে কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তার বহিঃপ্রকাশও কাম্য নয়।

আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে শেয়ার করতে করি। ২০০৬ সাল। প্রবল বাম জমানা। সিঙ্গুরে চাষীদের স্বার্থে মমতা ব্যানার্জী অনশন করছেন কলকাতায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে। এক বন্ধু মহিলা সাংবাদিক হঠাৎই চিৎকার ওঠেন, তাঁকে মারছে টি.এম.সি.-র কর্মীরা । সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিকরা তাঁকে কর্ডন করে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম বলে জানি, ঐ সাংবাদিকদের বক্তব্য এতটাই প্ররোচনামূলক ছিল যে, যেকোনো পার্টির সমর্থক ক্ষুব্ধ হতে বাধ্য। সাংবাদিকটি বলেছিলেন আসলে মমতার অনশন ভরং। সাংবাদিকটি তৃণমূল বিরোধী হতেই পারেন, কিন্তু পেশার জায়গায় তাঁর বহিঃপ্রকাশ করা কখনোই বাঞ্ছনীয় নয়। আমি সেই বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক ছিলাম। যদি আমি পারি তো তিনি পারবেন না কেন? তাঁর চ্যানেল তো কোন পার্টির মুখপত্র ছিল না।

এইরকম আর একটি বেসরকারী প্রোডাকশন হাউজ একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল খবর পরিবেশনের জন্য। এই সংস্থাটির এক সাংবাদিক লেনিনের জন্মদিনে, লেনিন কে বলে জনসাধারনের মতামত নেন। অনেকেই তা বলতে পারেন নি। সাংবাদিকটি লোকে যা বলেছেন, তাই খবরে দেখান। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তখনকার শাসকদল সি.পি.আই.এম শুধু সেই সংবাদ পরিবেশন সংস্থাটিকে দীর্ঘদিন বয়কট করেছিলেন, শুধু তাই নয়, সাথে সাথে সংস্থাটির বসও পরিবর্তিত হয়ে জায় এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

এতসব কথা বলার কারণ হল আজও আবার সাংবাদিকদের উপর আক্রমনের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগের তীর হিন্দু সংহতির মঞ্চের উপর। এই ঘটনা চাক্ষুস দেখিনি আমি। তবে বিভিন্ন চ্যানেলে দেখলাম উচ্চস্বরে সাংবাদিকরা বলছেন তাদের প্রতিনিধিরা আক্রান্ত। মুখ্যমন্ত্রী ঘটনার নিন্দা করে দোষীদের কড়া শাস্তি দেবেন বলে জানিয়েছেন। যোগ্য প্রশাসক তাই করেন। আগেরবারের মতো এবারেও সাংবাদিকরা নিগ্রহ প্রতিবাদে পথে হাঁটবেন। কিন্তু নিজের কমিউনিটিকে বাঁচানোর জন্য আমরা যেনো কেউ ধৃতরাষ্ট্র না হই। পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় কোন প্ররোচনা ছিলনা তো আজকের এই ঘটনায়!

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*