উত্তর ভারতের সেরা পুজো দেখতে চান

দুর্গাপুজো জাতীয় উৎসব। একথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। উত্তরপ্রদেশের লখনউ-তে অবাঙালিরা ২০০৪ সালে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজো। এই পুজো তখন নবদুর্গা বা নভরাত্রি হিসেবে পালিত হতো। হতো ডান্ডিয়া নাচ। ২০১০ সালে এই পুজোর বলা যায় বাঙালিকরণ করা হয়। পুজোর মূল উদ্যোক্তা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথাতেই বলি, সব দিক থেকে দেখতে গেলে উত্তর ভারতের এক নম্বর পুজো এটি। অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে সৌরভবাবু বলেন, এনেছি বাঙালিয়ানা। ২০১৩ সালে এই পুজো বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন স্বয়ং সাহারাশ্রী সুব্রত রায়। নিজের বাড়িতে পুজো শুরু করেন তিনি। যদিও মা তাঁর প্রতি সদয় হননি। বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জেলে যেতে হয় তাঁকে, পুজোটিও বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে লখনউ-র জানকীপুরমে সদ্‌ভাবনা সাংস্কৃতিক সমিতি সাহারা স্টেট-এর পুজোর খ্যাতি উত্তরোত্তর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।

কিন্তু কী আছে এই পুজোতে। কেনই বা এত খ্যাতি এর? সৌরভবাবু বললেন, আমাদের সন্ধিপুজোতে এবার আসছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পুজোয় আমরা কোনও রাজনীতি দেখি না। মা সবার। যেমন নবমীতে আমরা একটি লাকি ড্র কম্পিটিশন করি। এবার এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করতে আসছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিং যাদব। ভক্তিভরে হয় কুমারী পুজো। তবে, নবমীর রাত্রে যখন ধরিত্রী কেঁদে ওঠে, বলে নবমী নিশি গো হইও না ভোর। মা যেন না যান। সেই আকুতি সবার মনের মধ্যে থাকে। তিনি বলেন, সেই সময় মানুষের মনে যে দুঃখের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়, তাকে খানিকটা হালকা করতে আমরা নবমীর রাত্রিতে হাস্যকবি সম্মেলন করি। এর খ্যাতি ছড়িয়ে  পড়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে। প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই হাস্যকবি সম্মেলন যোগ দেন। ৩০ তারিখ অর্থাৎ দশমীর দিন দশেরা বা রাবণবধ ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। অশুভ শক্তির বিনাশ করে মা ফিরে যান কৈলাসে। সেদিনই রাত্রি ১২টায় আমরা করি বিসর্জন।

পুজো এখানে শুরু হয়ে যাচ্ছে ২৫ তারিখ সোমবার পঞ্চমীতে। মাতা কি চৌকি অর্থাৎ জাগরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা-এর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ষষ্ঠীতে আগমনী। সপ্তমীতে সকালে দান অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যায় কালচারাল প্রোগ্রাম। আর প্রত্যেকদিন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ভোগ গ্রহণ করেন পুজো মণ্ডপে।

ইংরেজরা যখন ভারতে ঢোকে, তখন প্রথমে রাজধানী বানিয়েছিল কলকাতাকে। বণিকের মানদণ্ড পরিণত হয়েছিল রাজদণ্ডে। একে একে বানিয়া ইংরেজরা বুঝতে পারে, কলকাতা কেন্দ্র করে ভারতে রাজ করা সম্ভব হবে না। তাই তারা রাজধানী সরিয়ে নেয় দিল্লিতে। সেই ঘটনাকেই চন্দননগরের আলো এবং দক্ষ শিল্পীদের হাতে তৈরি মণ্ডপের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। প্যাণ্ডেলের প্রথম গেটটি হলো হাওড়া ব্রিজের আদলে। হাওড়া দিয়ে ঢুকে তারপরে আছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। সেখান থেকে আগ্রার তাজমহল, পরে ইন্ডিয়া গেট। শেষ পর্যন্ত মণ্ডপ হলো অক্ষরধাম মন্দিরের রেপ্লিকা। এবারে পুজোর উদ্বোধন করবেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কে ডি শাহি। পুজো কর্তাদের দাবি প্রথমে লখনউ-র সেরা, পরে উত্তরপ্রদেশের সেরা হয়েছে এই পুজো। তারপর দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক-এর পুজোকে টক্কর দিয়ে উত্তর ভারতের প্রথম পুজোয় পরিণত হয়েছে এটি। এর উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোই আমাদের উদ্দেশ্য।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*