শীতের ছুটিতে দক্ষিণেশ্বর

কৈবর্তের মেয়ে জানবাজারের রানী পুন্যশীলা রাসমনি রাজবাড়িতে মানুষ হলেও কালী নামে বিভোর ছিলেন তিনি। কালীই ছিলেন তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। জানা যায় কোনও একসময় কাশী যাচ্ছিলেন রানী। নৌকা তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ রাসমনি স্বপ্নে দেখলেন দেবী ভবতারিণী তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ভবতারিণী বলছেন, কী হবে কাশী গিয়ে, ভাগিরথীর তীরে মন্দির তৈরী করে প্রতিষ্ঠা কর আমায়, অন্নও চাইলেন দেবী। অবশেষে নৌকা ফিরে আসে ঘাটে। ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে ৭২ বিঘা জমি কিনলেন রানী রাসমনি। ১৮৪৭ এ শুরু হলো কাজ। এরপর ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে স্নানযাত্রার দিনে ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরী হলো মন্দির।রুপোর পদ্মের উপর শায়িত শিবের বুকে দেবী ভবতারিণী দাঁড়িয়ে আছেন। এক খন্ড পাথর কেটে তৈরী হয়েছে দেবী মূর্তি। পরনে লাল বেনারসী, মাথায় কিরীট, গলায় সোনার মুন্ডমালা।

মন্দিরের মূল দরজা থেকে ঢুকে দোকানপাট রেখে এগিয়ে কালী মন্দিরে দেবী কালী অর্থাৎ ভবতারিণী ছাড়াও আরও অনেক দেবতা রয়েছেন। ঢুকতেই বাম দিকে রাধাগোবিন্দ মন্দির, ডান দিকে গঙ্গার পাড় ধরে সারি দিয়ে নির্ঝরেশ্বর, নাগেশ্বর, নকুলেশ্বর, জটিলেশ্বর, রত্নেশ্বর, যোগেশ্বর, নরেশ্বর, নদীশ্বর, নাদেশ্বর, জগদীশ্বর, জলেশ্বর, যজ্ঞেশ্বর এই ১২টি অর্থাৎ দ্বাদশ শিবমন্দির আছে। দক্ষিনে আছে নাট্যমন্ডপ। মন্দিরের মাঝখান জুড়ে প্রশস্ত চত্বর। উত্তর, দক্ষিন ও পূর্বে তিন সার দালানকোঠা আছে। এই দালানের উত্তর পশ্চিম কোঠায় আগে ঠাকুরের বসবাস ছিল বলে জানা যায়। ভক্তদের সমাগম আজও চোখে পড়ার মতো।

মন্দির থেকে বেরোতেই দক্ষিন দিকে তন্ত্রসাধনার পীঠস্থান পঞ্চবটী বেদিটিও দর্শনার্থীদের নিবিড় শান্তি দেয়। তবে অতীতের গা ছমছমে পরিবেশ এখন আর নেই। মন্দিরের সংস্কারও হয়েছে। মন্দির লাগোয়া দোকানপাটগুলির অবস্থানেও অনেক শৃঙ্খলা এসেছে। মন্দির থেকে বেরোতেই মূল দরজার ডান দিকে ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউস চত্বরে ও নতুন করে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের মন্দির তৈরী হয়েছে। মূর্তি তৈরী হয়েছে শ্বেত মর্মরে ঠাকুরেরও।

বিশেষ উৎসব

প্রতিবছর ১ জানুয়ারি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের কল্পতরু উৎসব দক্ষিণেশ্বরের সবথেকে বড়ো উৎসব। কালীপুজোতেও লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগমে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে দক্ষিণেশ্বর। সকাল ৫.৩০, ১০.৩০, বিকেল ৪.৩০ ও সন্ধ্যে ৭.৩০টা অবধি খোলা থাকে মন্দির। মন্দিরের পশ্চিম দিকে রয়েছে গঙ্গা। প্রচলিত আছে এই গঙ্গায় স্নান করলে পুণ্য অর্জন করা যায়। এই ঘাট থেকে বেলুড় মঠ যাওয়ার জন্য নৌকা পাওয়া যায়। সময় থাকলে চট করে বেলুড় মঠটাও ঘুরে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। নৌকায় না গিয়ে বাসে চেপেও দক্ষিণেশ্বর পৌঁছে যাওয়া যায়।

কীভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে শিয়ালদহ ডানকুনি লোকালে চেপে দক্ষিণেশ্বর স্টেশন। সেখান থেকে মন্দির চত্ত্বর মাত্র মিনিট দুয়েকের হাঁটা পথ। স্টেশনে নামলেই সামনে দেখা যায় দক্ষিনেশ্বর মন্দির। এছাড়াও শহীদ মিনার থেকে বহু বাস এবং হাওড়া থেকে প্রচুর সিএসটিসি, এসবিএসটিসি, মিনি সমস্ত রকমের বাসে চেপে পৌঁছে যাওয়া যায় দক্ষিণেশ্বর। এছাড়াও বাবুঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মিনিবাস পরিষেবা চালু আছে।

কোথায় থাকবেন?

এখানে থাকার জন্য আশেপাশে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আছে গেস্ট হাউসও। যেমন, দক্ষিণেশ্বর গেস্ট হাউস, বেলুড়মঠ ইন্ডিয়ান গেস্ট হাউস, দেবমাল্য গেস্ট হাউস ছাড়াও রয়েছে রেড রোস, দ্য পার্ল, সোনার কেল্লার মতো সস্তায় সুন্দর হোটেল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*