সমুদ্র আর ঝাউবনের অনবদ্য মিশেল তালশারি

নিউ দীঘা হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওড়িশার সমুদ্র সৈকত তালশারি। এখন দীঘা থেকে বাইপাস ধরে সোজা পৌছে যাওয়া যায় তালশারি। শান্ত, স্নিগ্ধ এই সমুদ্র সৈকত। এখানে জন কোলাহল প্রায় নেই বললেই চলে। দোকানপাট ও খুব কম। প্রধানত এই অঞ্চলে জেলেদের বসবাস। এখানে গেলেই চোখে পড়বে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে জেলেরা নিজেদের নৌকা নিয়ে ঘরে ফিরে আসছে।

জেলেদের থেকে নিজের পছন্দমতো মাছ কিনে নিয়ে সামনের কোনও দোকান থেকে ভেজে নিয়ে চায়ের সঙ্গে ডিপ ফ্রাই। উফঃ, সত্যি সে অনুভূতি নিজে চাক্ষুষ না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল, আর পাড়ে সারি সারি শাল, পিয়াল, ঝাউয়ের অরণ্য। সমুদ্র আর ঝাউবনের রোম্যান্টিকতা যাদের ভালো লাগে তাদের কাছে অনবদ্য ডেস্টিনেশন এই তালশারি। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুয়েরই প্রশস্তি আছে তালশারিতে। তবে চরের কারনে সূর্যাস্ত এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না।

ঠিক ১২ কিলোমিটার দূরে সুবর্ণরেখা সাগরে মিশেছে। তারই একটি শাখা এসে চড়া তৈরী করেছে। তবে নৌকা চড়ে সমুদ্র ঘুরলে জেগে ওঠা দ্বীপ থেকে সূর্যাস্ত দেখে নেওয়া যায়। ভাঁটা এলে সমুদ্রের জল প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত সরে যায়। তখন ঝিনুকে মোড়া সৈকতে শুরু হয়ে যায় লাল কাঁকড়ার দাপাদাপি। নীল আকাশের নীচে সবুজের মাঝে শুধুই বালি আর বালি।

কোথায় যাবেন?

চন্দনেশ্বরঃ তালশারি থেকে দেখে নিতে পারেন মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে চন্দনেশ্বর মন্দির। মন্দিরটি খুব একটা বড় নয়। জলবেষ্টিত নিরাকার দেবতা চন্দনেশ্বর শিব খুবই জাগ্রত। বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তের দল মন্দিরে আসেন। চৈত্র মাসে এখানে বিশাল মেলাও বসে।

উদয়পুর-দত্তপুরঃ তালশারি থেকে ফেরার পথে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে ডানদিক বরাবর দেড় কিলোমিটার গিয়ে আরও এক সমুদ্র সৈকত উদয়পুর-দত্তপুরও ঘুরে নেওয়া যেতেই পারে। ঝাউবনের ছাওয়ায় ঘেরা নির্জন এই সৈকতে কিছুটা সময় কাটাতে বেশ ভালোই লাগবে। সঙ্গে উপরি হিসেবে রয়েছে জেলেদের নৌকা ও লাল কাঁকড়ার আনাগোনা। সামান্য দোকানাটও আছে এখানে।

কীভাবে যাবেন?

সোজা তালশারি যাওয়ার জন্য কোনও বাস নেই। আপনাকে যেতে গেলে দীঘা হয়েই যেতে হবে। দীঘা থেকে মোটরভ্যান, টোটো বা গাড়ি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন তালশারি। গাড়ি ভাড়া আয়ত্তের মধ্যেই। কলকাতা থেকে যেতে হলে বাস বা ট্রেনে চেপে সোজা দীঘা। এখন দীঘা আসার জন্য কলকাতা থেকে প্রচুর বাস ছাড়ে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে দীঘায় আসতে আর বিশেষ কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। বহু জেলা থেকেই বর্তমানে দীঘার বাস যায়।

কোথায় থাকবেন?

থাকার জন্য দুটো পথ আপনার জন্য খোলা আছে। একটা পথ অবশ্যই তালশারিতে থেকে যাওয়া,আর দ্বিতীয়টি অবশ্যই দীঘায় ফিরে আসা। কিন্তু একটু নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চাইলে তালশারিতে এক রাতের জন্য থেকে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। থাকার জন্য ওড়িশা ট্যুরিজমের পান্থশালা থাকার পক্ষে আদর্শ। সুন্দর খাওয়া দাওয়া পাওয়া যায় ক্যান্টিনে। ওখানে গিয়ে বুকিং না করে আগেভাগে কলকাতার লেনিন সরনীর অফিস থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো হবে। এছাড়াও বেশকয়েকটি হোটেল তৈরী হয়েছে। যেমনঃ হোটেল মেফেয়ার, দ্য পার্ল হোটেল, নিউ হোটেল হোয়াইট প্যালেস, জেপি রিসর্টের মতো অনেক হোটেল আছে এখানে। তবে কম খরচে সুন্দর ব্যবস্থা পেতে গেলে ওড়িশা ট্যুরিজমের পান্থশালায় আসতেই হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*