কেন্দ্রের পাশে অগ্রণী ভুমিকায় বাংলাকে দেখা যাবেঃ রাষ্ট্রপতি

পিয়ালী আচার্যঃ মঙ্গলবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০১৭, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে নাগরিক সংবর্ধনা দিল রাজ্য সরকার। নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, মুখ্য সচিব মলয় দে প্রমুখ। রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতায় স্বাধীনতার ৭০ বৎসর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২০২২ সালে কেন্দ্র যে বিশাল কর্মসূচী নিয়েছে সে কথা জানান। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার কথাও বলেন। বলেন, কেন্দ্রের বিভিন্ন ভূমিকায় বাংলা অগ্রণী ভুমিকা নেবে। কেন্দ্রের পাশে দাঁড়াবে রাজ্য।

রাষ্ট্রপতির বক্তব্য জুড়েই ছিল বাংলা, বাঙালীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তিনি বাংলায় সমবেত মানুষকে নমস্কার জানিয়ে বলেন, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁর প্রথমবার কলকাতায় আসা কিন্তু বাংলার সাথে আছে তাঁর নাড়ির টান। তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি মানুষেরই বাংলা ও বাঙালীদের দ্বারা ঋদ্ধ। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের জাতীয় যে পরিচিতি মানে যে জাতীয় সঙ্গীত সেটিই রবীন্দ্রনাথে লেখা। সেই রবীন্দ্রনাথই বাঙালী। বন্দেমাতরমের রচয়িতা আর এক বাঙালী বঙ্কিমচন্দ্র, তাঁদেরকে প্রণাম জানাই। প্রণাম জানাই নেতাজীকে, জয় হিন্দ কথাটির প্রবক্তা। সম্প্রতি মণিপুরে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। সেখানকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে INAএর নেতৃত্বে প্রথম জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন নেতাজী। স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজীর ভুমিকার কথা বলেন তিনি। বলেন স্বাধীনতা ত্বরাণ্বিত হয়েছে এইসকল মনিষীদের জন্য। আমি নেতাজী ভবন এবং জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি আগামীকাল যাব, যাব বেলুড়মঠেও। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, মাতঙ্গিনী হাজরা, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দিনেশ প্রমুখ মনিষীদের কথা রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন। উল্লেখ করেন বাংলার কৃতী সন্তান বিদ্যাসাগর, রামমোহন, সরোজিনী নাইডু, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞানে অবদানের জন্য মেঘনাদ সাহা, জগদীশ চন্দ্র বসু, সাহিত্যে অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র, নজরুল এবং চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য সত্যজিত রায়, উত্তমকুমার। এমনকি বর্তমান প্রজন্মের প্রসেনজিতের কথাও বক্তব্যে উল্লেখ করেন। এ সংবর্ধনা পেয়ে তাঁর খুব ভালো লেগেছে। কলকাতাকে তিনি মিষ্টি আড্ডা ও ফুটবলের শহর বলেও উল্লেখ করেন। বলেন ভবিষ্যতে বাংলার আরও উন্নতি হবে। তিনি অনূর্দ্ধ ১৭ বিশ্বকাপের বাংলার দর্শকদের ভূমিকার বিশেষ প্রশংসা করেন। তার বক্তব্যে বাংলা ও বাঙালীর বিভিন্ন সদর্থক কথা তুলে ধরলেও দেশভাগের যন্ত্রণার কথা ছুঁয়ে যান তিনি। হালকাভাবে ছুঁয়ে যান বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলার ভূমিকার কথা। উল্লেখ করেন তাঁর পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর কথা। শ্রদ্ধা জানান তাঁকে।

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে মুখ্যমন্ত্রী যখন সংবর্ধনা জানান তখন একটি আঁকা ছবি তিনি তাঁকে দেন। রাষ্ট্রপতি পরে বলেন, আমি যখন জানলাম এটি মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি, তখন আমি খুবই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। রাষ্ট্রপতি বলেন, এটা স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রপতি ভবনের দেওয়ালে টাঙানো থাকবেই কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে সারাজীবন আমার হৃদয়ের কাছে থাকবে এই ছবি। আজকের এই সংবর্ধনায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা জানান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র শোভন চ্যাটার্জী, কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য সোনালী চক্রবর্তী-ব্যানার্জী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য সুরঞ্জন দাস, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী, চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, অভিনেতা প্রসেনজিত চ্যাটার্জী, শিল্পপতী মায়াঙ্ক জালান, রুদ্র চ্যাটার্জী, মোহনবাগান ক্লাবের সচিব অঞ্জন মিত্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ইকবাল আহমেদ, সিএবি এর তরফে অভিষেক ডালমিয়া।





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*