“বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বাণী”

“রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন রক্তমাখা অস্ত্রহাতে যত রক্ত আঁকি

শিশু পাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি”।

তা সত্ত্বেও সারা বিশ্ব জুড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি। কোরিয়ার একছত্র নায়ক (সুপ্রিম লিডার) কিম প্রকাশ্য রাস্তায় করছেন সশস্ত্র মহড়া। রক্তপিপাসু কিমের পরমানু মহড়া হাড় হিম করা সন্ত্রাসের ছবি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিম সরাসরি হুমকি দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংসের। মারণাস্ত্রের শোভাযাত্রা চলছে। আমেরিকাকে সবক শেখাতে চাইছে কিম, কিন্তু কিম মনে হয় পড়েন নি মহত্মা গান্ধীর এই দুটি লাইন-

“An eye for an eye only ends up making the whole world blinds”.

অন্যদিকে আমেরিকাতে আজকে একটা বিপরীত চিত্র দেখা গেলো। সেটা ধংসের নয়, সৃষ্টির। নঞর্থক নয়, সদর্থক। আমেরিকার ওয়াশিংটন ও ফ্লোরিডায় নাবালকদের হাতে অস্ত্র দেওয়ার প্রতিবাদে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমেছে। মনে পড়ে ২০০৭ সালে গুরুগ্রামের একটি স্কুলে এক বাচ্ছা পড়ুয়া রিভলবার দিয়ে গুলি করে দেয় তার সহপাঠীকে। এই ঘটনার কভারেজ করেছিলাম আমি। সেদিনও বলেছিলাম, আজও বলছি দোষ বাবা-মায়ের। শিক্ষকরা অবশ্যই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। সহজ-সরল, সুকুমারমতি বাচ্ছাদের মনে হিংসার বীজ, প্রতিশোধস্পৃহা বপণ করে দেন অভিবাবকরাই। প্রতিনিয়ত বাবা-মায়েরা নিজেদের জীবনে এক অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন, বাচ্ছার জীবনে তার প্রভাব পড়ে। অনেকে বলেন টিভি দেখা এই হিংসার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, অনেকে বলেন ভোগবাদ। তবে আমার বক্তব্য তা নয়। বিশ্বায়নের যুগে এগুলিকে অস্বীকার করে থাকা যায় না। আসলে মা-বাবা, শিক্ষক সমাজের সর্বত্র সহনশীলতার অভাব দেখে এরা উৎসাহ পায়। বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর প্রতিযোগিতা, ভৃত্যের প্রতি প্রভুর দাসসুলভ মনোভাব, স্বামী-স্ত্রীর প্রতিনিয়ত ঝগড়া-দন্দ্ব, সিনিয়রদের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব, জুনিয়রদের প্রতি ভালোবাসার অভাব, এগুলি বাচ্ছারা দেখে এবং এর থেকেই উৎসাহ পায়।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি বিশ্বাস করি কেউ ক্রিমিনাল হয়ে জন্মায় না। পরিবেশই তাকে ক্রাইম করতে শেখায়। ব্যতিক্রম নিশ্চয় আছে। আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয়তা, পরিস্থিতির চাপ অবশ্যই মানুষকে অনেক সময় প্রতিশোধ নিতে বাধ্য করে। তা বলে ১ থেকে ১৬ বা ১৮ বছরের বাচ্ছাদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দেওয়া কোনও সমাধান নয়। এখন বন্দুক, রিভলবার ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করা যায়। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সরিয়ে আনতে হবে ওই বিপদমুখী পথ থেকে। দরকার মানসিকতার পরিবর্তন, মানবিকতার উত্তরণ।

ক্ষমা হলো প্রকৃত মানুষের প্রধান পরিচয়। তাই আবারও মহত্মা গান্ধীর ভাষায় বলি-

“The weak can never forgive

Forgiveness is the attribute of strong”.

পরিশেষে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি- “ বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বাণী”।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*