এক মুহূর্তে জুরাসিক যুগে

অমিত মুখোপাধ্যায় : এক মুহূর্তে ছুঁয়ে ফেলা যায় পনেরো কোটি বছরের পুরোনো গাছপালাকে।

হ্যাঁ। পনেরো কোটি বছর। মানে জুরাসিক যুগ। পৃথিবীর বুকে তখন ডাইনোসরদের রাজত্ব। সেই সময় গাছ বলতে বড়ো বড়ো ফার্ন গাছ। আর সেই সব ফার্ণ গাছ জীবাশ্ম হয়ে শুয়ে আছে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড়শ্রেণির আশেপাশে। না। যে কেউ নয়। এই জীবাশ্মের বয়েস নির্ধারণ করেছে দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান লখনৌয়ের ‘বীরবল সাহনি ইন্সটিটিউট অব পেলিও বোটানি’র বিজ্ঞানীরা। রাজমহল পাহাড়শ্রেণি বলতে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলা আর পাকুড় জেলা। আর জুরাসিক যুগের জীবাশ্মের একটি বড়ো ভাণ্ডার পাওয়া গেছে সাহেবগঞ্জের মান্ড্রো এলাকার তারা পাহাড়ে। নাম তারা পাহাড়। কিন্তু আদতে একটু বেশি উঁচু জমি।  আর এই জমিতে এখানে-ওখানে ছড়িয়ে আছে জীবাশ্ম। বড়ো বড়ো গাছের গুড়ি। এমন ভাবে ভেঙেছে সেই সব জীবাশ্ম যে মনে হবে কেউ করাত দিয়ে কেটে নিয়ে গেছে। দেখলেই শিহরণ জাগে। গাছের ভিতরের বৃত্তগুলি দৃশ্যমান। ভেঙে যাওয়া অংশ দেখলে মনে হবে একটু আগে কেউ কেটে নিয়ে গেল গাছটা। প্রচুর ফসিল চুরি হয়ে গেছে তারা পাহাড় ও আশপাশ এলাকা থেকে।  ঝাড়খণ্ড সরকারের বন বিভাগের প্রচারের পর এখন গ্রামের মানুষ সচেতন হয়েছে। আর বাইরের লোককে চট করে ওই জীবাশ্ম নিয়ে যেতে দেন না তাঁরা। বন বিভাগ মান্ড্রোতে একটি ‘ফসিল পার্ক’ গড়ে তুলছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দেরি হবে। তার আগে পর্যন্ত এই সব জীবাশ্ম সংরক্ষণের উপায় কী? উত্তর দিলেন সাহেবগঞ্জ বন প্রমণ্ডলের বিভাগীয় বন আধিকারিক মনীশ তিওয়ারি। বললেন, ‘খুব কঠিন কাজ। কারণ তারা পাহাড়-সহ যে সব জায়গায় এই সব জীবাশ্ম পড়ে আছে তা ব্যক্তিগত জমি। ওই জমি থেকে জীবাশ্ম তুলে আনা বা ওই জমি অধিগ্রহণ করতে সময় লাগবে। তত দিন ওই সব জীবাশ্ম পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষই আমাদের ভরসা। কারণ বন বিভাগের অত বড়ো পরিকাঠামো নেই এই মুহূর্তে।’ তারা পাহাড় প্রচার পেয়েছে বেশি। কিন্তু জুরাসিক যুগের প্রচুর জীবাশ্ম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সাহেবগঞ্জ জেলার সকরিগলি-সহ নানা জায়গায়। এই সব জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা করছেন সাহেবগঞ্জ কলেজের অধ্যাপক রঞ্জিতকুমার সিং। তিনি বললেন, ‘জনসচেতনতা তৈরি না হলে সরকারের পক্ষে এত বিরাট জীবাশ্ম ভাণ্ডার সামলানো মুস্কিল।’

শুধু সাহেবগঞ্জ জেলা নয়। পাশের পাকুড় জেলাতেও পাওয়া গেছে জুরাসিক যুগের জীবাশ্মের বিপুল ভাণ্ডার। পাওয়া গেছে পাকুড় শহরের গায়েই সোনাজোড়িতে। পাকুড়ের বিভাগীয় বন আধিকারিক রজনীশ কুমার জানিয়েছেন, এই সব জীবাশ্ম সংরক্ষণ করে এখানেও একটা ‘ফসিল পার্ক’ গড়ার পরিকল্পনা চলছে। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন বন আধিকারিক ফতেশ বাহাদুর সিং বললেন, পাকুড় বা সাহেবগঞ্জ কোনও ব্যক্তিক্রম নয়। রাজমহল পাহাড়শ্রেণির বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালালে এমন জীবাশ্ম ভাণ্ডারের সন্ধান মিলবে। যা পনেরো কোটি বছর আগের।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*