দুয়োরানি আই লিগ-এ সনিই প্রধান আকর্ষণ

সুমন্ত চক্রবর্তী : সনি নর্ডি আপামর মোহনবাগানিদের হার্টথ্রব আজ রাতের ফ্লাইটে কলকাতাতে নামছেন। কাল যোগ দেবেন প্র্যাক্টিসে। অনেক আগেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, সামনের মরশুমে মোহনবাগানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন, খেলবেন আই লিগ-এ। সনি ফেরাতে পারেননি মোহনবাগান জনতার এত ভালোবাসা, ফেরাতে পারেননি মোহনবাগান শীর্ষকর্তাদের নাছোড়বান্দা হয়ে লেগে থাকা। তাই ফিরিয়ে দিয়েছেন টাকার থলি নিয়ে দৌড়োনো বাকি আইএসএল ফ্র্যানচাইজিদের। নিশ্চিন্ত করেছেন মোহন-জনতাকে যাদের রাত্রির ঘুম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল কর্তারা আইএসএল না খেলার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে। কারণ বেশ বোঝা যাচ্ছিল ৩ বছরের সাধের সেট টিম আর ধরে রাখা যাবে না। শেষ অবধি দল-এর প্রাণভোমরাকে অন্তত ধরে রাখতে পারায় খানিকটা স্বস্তির আশা গঙ্গা পাড়ের তাঁবুতে।

এমনিতে দেশের প্রথম সারির ১৫০ জন খেলোয়াড় যে এবার মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ডাক উপেক্ষা করে আইএসএল-এ নাম লিখিয়েছেন, এটা প্রত্যাশিতই ছিল এবং এই নিয়ে সুস্থ যুক্তিতে খেলোয়াড়দের দোষারোপ করা যায় না। এবার যাই বলুক। মোহন-ইস্ট কর্তারা মুখে যতই বলুন জার্সি খেলবে, ঘটনাটা হলো পরিস্থিতি যে এতটা খারাপ হবে সেটা তারা আন্দাজ করতে পারেননি। কিছু বুদ্ধিমান তরুণ কর্তা হয়তো পেরেছিলেন, কিন্তু আজকের দিনেও ১৯৮০-৯০ সালের বস্তাপচা ধ্যানধারণা আঁকড়ে পরে আছেন যে কতিপয় বৃদ্ধ কর্তাকুল, তাদের ভাবনায় আসেনি। আসেনি কারণ যুগপোযোগী ভাবার ক্ষমতাই তাদের নেই। যাক গে, সেটা অন্য প্রসঙ্গ ঘটনা হলো আই লিগে নিয়ে যাই বলুন, যতই এখন থেকে এএফসি চ্যাম্পিয়ন লিগ খেলার ছাড়পত্র মিলুক, আই লিগ যে এবার সত্যিকারের দ্বিতীয় শ্রেণির লিগে পর্যবসিত হয়েছে এ নিয়ে সন্দেহ কারওর খুব একটা নেই। টিম টিম করে জ্বলছে শুধু। মোহনবাগান-ইস্ট বেঙ্গল-এর সাথে টক্কর দেওয়ার মতো দল খাতায়-কলমে অন্তত নেই। সে আইজল এফসি-এর মতো কেউ হঠাৎ উঠে এসেছে চমকে দিতেই পারে কারণ ফুটবল খেলাটা মাঠে, হয়, কাগজে-কলমে না কিন্তু সেটা হলে স্টার অ্যাট্রাকশন যাকে বলে সেটা কিন্তু ওই দলগুলির কারুর নেই, এমনকী মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলেরও সেই অর্থে নেই। এরম সময়ে সনি নর্ডির মতো একজন কোপা-আমেরিকা খেলা মেগাস্টার আই লিগে যোগদান করে এক ধাক্কায় যে লিগকে অন্তত উচ্চতায় নিয়ে গেলেন একথা স্বীকার করতেই হবে। সনি নর্ডির মতো এক বর্ণময় চরিত্র, একজন সত্যিকারের ক্রাউডপুলার, একা যার খেলা দেখতে মাঠে লোক আসে তার আই লিগে যোগদান নিয়ে তাই হয়েছে এত উৎসাহ। নিন্দুকেরা বলছেন বটে যে সোনি নর্ডির প্রায়োরিটি আলাদা, তার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে বাকি ভারতীয় ফুটবলারদের দৃষ্টিভঙ্গিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক না, কিন্তু সেসব বিতর্কর মধ্যে না গিয়ে একটা কথা বলাই যায় যে দিনের শেষে সনি নর্ডি মোহনবাগানে খেলবেন, আই লিগ খেলবেন।

মোহন-জনতা তো বটেই, এআইএফএফ কর্তাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত তার কাছে, এরকম একটি সিদ্ধান্ত  নেওয়ার জন্য। অন্তত একজন মহাতারকাকে তো কেনা গেল না শুধু টাকা দিয়ে, মোহন-জনতার ভালোবাসা ফেরাতে গিয়ে নিজেরই অজান্তে তিনি হয়ত ভারতীয় ফুটবলকেই ফিরিয়ে দিলেন অনেক কিছু। ভবিষ্যতে যার হিসেব করবে।

তাই এটা নিশ্চিন্তে বলা যায় দুয়োরানি আই লিগ-এ তিনিই প্রধান আকর্ষণ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*