গুজরাট নির্বাচনে বিজেপির নৈতিক পরাজয় হয়েছে : মমতা

পিয়ালি আচার্য : কেন্দ্রীয় সরকারের কারও কাছে মনে হয় টিকি বাঁধা আছে। সরকার প্রতিহিংসার খেলা খেলতে পারে না। কেন এ নোটবন্দি? এতো যেন একটা  অত্যাচার ও মানসিক যন্ত্রণা। কালো টাকা বাজেয়াপ্ত করার জায়গায় দেশের অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে, এটা নাকি ডিজিটাল ইকোনমি। আমরাই তো সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে ডিজিটাইজড করেছি। এজন্য আমরা গোল্ডেন পিকক পুরস্কারও পেয়েছি। মাঝে  মাঝে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, চীন সরকার যদি পেটিএম, আলিবাবার বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাহলে ভারত করে না কেন? পর্দে কে পিছে ক্যা হ্যায়, অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত তাহলেই সত্য সামনে আসবে। নোটবন্দির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে এই কথাগুলি বলেন।

মু্খ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সবসময় তো আর এই সরকার ক্ষমতায় আসবে না। এই সরকারের অন্য কোনও কাজ নেই, শুধুই ভাষণ দেওয়া কাজ। গুজরাট নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন গুজরাটে বিজেপির নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। আচ্ছে দিনের কথা বলে কেন্দ্রের শাসক দল, তাহলে দেশে বুরা দিন এলো কেন? সব মন্ত্রীরা দলের সম্প্রসারণে ব্যস্ত। ধার্মিক কার্যক্রমের নামে কেন্দ্রের শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীরা একের পর এক রাজ্যে দল ভাঙাচ্ছে। আমরা দীপাবলিতে যেমন আলোর উৎসব করি, বিজেপি নোটবন্দির বর্ষপূর্তি পালন করে অন্ধকারের উৎসব পালন করছে। যেন চোরের মায়ের বড়ো গলা। মুম্বাই গেছিলাম আমি, সেখানেও কেন্দ্রের নীতি নিয়ে অনেকেই অখুশি। আবারও গুজরাত প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গুজরাটে যদি এত কাজ করেছো তাহলে কেন্দ্র, রাজ্যের সব মন্ত্রী, দলীয় নেতা, প্রধানমন্ত্রী-সহ সংগঠনের উপরতলার নেতা, এজেন্সি সবাই মিলে গুজরাতে কী করছে? বিজেপির নৈতিক পরাজয় হয়েছে বলার পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জি বলেন, অন্য দলকেও পরিস্থিতির মোকাবিলায় চেষ্টা করতে হবে। গুজরাটের মানুষ খুশি নয়, তারাই যোগ্য উত্তর দিন।

তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০১৬-তে ১৪৪ ধারা করে নির্বাচন করা হয়েছিল বাংলায়।  তা সত্ত্বেও মানুষ যেভাবে তাদের জিতিয়েছিলেন তার জন্য জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ বলেন মমতা। গুজরাটেও এইরকম পরিস্থিতি আসতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি। স্টেট ফোর্স, সেন্ট্রাল ফোর্স সবাইকে দিয়ে গুজরাটে নির্বাচন করবে বর্তমান শাসক দল।

নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে এই সরকার। কোনও শাসন ব্যবস্থা নেই, শুধু দলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে। কেন্দ্রে এ রকম সরকার আমি কখনও দেখিনি। পার্টির নামে দাঙ্গা করছে, যার কিছু থাকে না সে মারপিট করে। ওরা গুন্ডামি করে, মানুষ এসব পছন্দ করেন না। মানুষ শান্তির পক্ষে।

গুজরাতে নির্বাচনের নামে সমস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীক একত্রিত করছে। এদিকে দার্জিলিং থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নিচ্ছে, আর বিজেপি নেতাদের নিরাপত্তার নামে একগাদা বাহিনী মোতায়েন করছে।

এই নোটবন্দিতে একটা দলেরই ফায়দা হয়েছে তা হলো কেন্দ্রের শাসক দল, বলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওদেরই সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলেছিলেন ৩৮ শতাংশ সন্ত্রাসবাদ করে যাবে, ২৮ শতাংশ মাওবাদ কমে যাবে, কিছুই তো হলো না। বলেছিলেন বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা এনে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন, কিন্তু কোথায় কী? ভ্রষ্টাচারের প্যারাডাইসে বসে আছেন। এই নোটবন্দি করে ৩ লক্ষ টাকা জিডিপির ক্ষতি হয়েছে। ইনভেস্টমেন্ট গ্রোথ ১৫-১৬ সালে ছিল ৬.১১ শতাংশ, ১৬-১৭ সালে হয়েছে ০.৫ শতাংশ। কীভাবে দেশ উন্নতি করবে? ৭৫ হাজার জন ভারতীয় শিল্পপতি, উদ্যোগপতি কেন্দ্রের ভ্রান্ত নীতিতে হয়রানির শিকার হয়ে দেশ থেকে চলে গিয়ে এনআরআই হয়ে গিয়েছেন। ১২ হাজার ৫০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন । ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নোটবন্দির শিকার হয়ে মারা গিয়েছেন, তাই আমরা এই দিনটিকে ব্ল্যাক ডে করে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও একইভাবে প্রতিবাদ করছেন। কেন্দ্রের শাসকদল  বিরোধী সব দল আমরা একসাথে লড়াই করছি। সংসদেও আমরা বিরোধীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।  জিএসটির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাই এর বিরুদ্ধে আমরা আমাদের প্রতিবাদ জারি রাখবো। সুরাতে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। বস্ত্র ব্যবসায়ী, স্বর্ণ  ব্যবসায়ী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। এই সরকারের আমলে দলিতদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ক্ষতি তো হচ্ছেই তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের যুব সম্প্রদায়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার তার সমস্ত গ্রহণযোগ্যতা, দায়বদ্ধতা, বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নাম না করে মমতা বলেন, আপনার ব্যক্তিগত ইগো ও প্রতিহিংসার জন্য আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন না। নোট  বাতিল ও জিএসটি গোদের উপর বিষফোঁড়া বলেও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি এদিন নাম না করে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মহম্মদ বিন তুঘলকের খামখেয়ালিপনার তুলনা টানলেন মুখ্যমন্ত্রী । এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মমতা ব্যানার্জি বলেন, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম, বিজেপি নিজেদের ভুল, ত্রুটিগুলোকে ঢাকা দিতে বিরোধীদের উদ্দেশে শুধুই আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে। নিজেরা কোনও কাজ করবে না, আর যারা কাজ করবে তাদের বাধা দেওয়া হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। গত সোমবার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচার কালো করে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পর বুধবার আর কোনও রাখঢাক না করেই কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*