অনুগল্প: বিচার

নিজামউদ্দিন মোল্লা:

সৌম্য একবার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ফিরে আয় পুজা!ফিরে আয়!”

কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ, পুজার নিস্তেজ দেহ লুটিয়ে আছে মাটিতে। আসলে দাঙ্গায় কিছু লাভ হয় না, পুজাকে শুধু সৌম্য একাই হারাল না, এই সমাজ ব্যবস্থা তাকে মুক্ত করে ছাড়ল।

সৌম্যের চোখে জল আসেনি, সে নির্বাক হয়েছে মাত্র।তার প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে গেছে দাঙ্গায় দল। কিসের ধর্ম এদের, কি বা রাখে এই ধর্মে? কেনই হল এত ধর্ম! এই কথা ভাবতে ভাবতে সজোরে কেঁদে উঠল সৌম্য। শুধু একবার চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো, শুধু মানুষের নিস্তেজ দেহ পড়ে আছে তেপান্তরের মাঠে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “হায়রে এ সমাজ! হায়রে তোর ধর্ম! যেখানে মানবতা বিকৃত করেছে এই দাঙ্গার ধর্ম, সেখানে নাস্তিক হওয়া কি ভুল কথা! হে ভগবান, হে আল্লাহ, হে গড। তুমি যে নামেই হোক না কেন তুমি তো ঈশ্বর, তুমি তো প্রভু, তোমার নামের ব্যবহৃত ধর্ম যদি করে নিরিহ মানুষের দানবীয় হত্যা, তাহলে তুমি কিসের প্রভু!” এই বলেই পুজার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অঝোরে কাঁদতে থাকল।

কিছুক্ষণ এই ভাবে চলল, হঠাৎ বেশ কয়েকজন তাকে ঘিরে ফেললো। আর বলল, “তুই হিন্দু না মুসলমান?”

সৌম্য মুখটা তুলে বলল, “আমি নাস্তিক! শুধু ঈশ্বর বিশ্বাসী। ”

তারা বলল, “এটা কিভাবে হয়?”

“যদি জাত-পাত ঈশ্বরের বিচারের স্থান হত, তাহলে কি একটা ধর্ম হত?”এটা বলতে না বলতেই দলবাধা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সৌম্যের গলা লক্ষ্য করে তরোয়াল টা চাললো। শুধু সৌম্য একটাই কথা বলল,”বিচার,বিচার, বিচার।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*