অমিতাভ মালিক-এর স্মৃতিচারণ

অমিতাভ বিয়ে করেছিল তিন মাস আগে- আমার জুনিয়র ছিল। ট্রেনিং করেছি একসাথে- হাসি হাসি মুখের অমিতাভ সবার প্রিয় ছিল।

সাত দিনের ছুটিতে তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা সেরেছিলো- যখন ফিরে যাচ্ছিলো রুপাকে আশ্বাস দিয়েছিল হানিমুনে দার্জিলিং নিয়ে যাবে।

দার্জিলিং গেছিল অমিতাভ- তবে একা। একা নয় ঠিক- সাথে ব্যাটালিয়নের ফোর্স ছিল। উত্তপ্ত দার্জিলিং এর রোজনামচায় মাঝে মাঝে রুপাকে মনে পড়লেও সামলে রাখতো নিজেকে। ফেরার কথা কদিন বাদে।

রুপা কাঁদতো। রোজ। স্নানঘরে। বিছানায়।মুঠোফোনের তরঙ্গে।

অমিতাভ হাসত। আর তো কদিন। ভালোবাসার পরত বুলিয়ে দিত রুপার চোখের ঝর্ণায়। মায়ার সোহাগ দুর্বল করে দিত অমিতাভ কেও। রেশমের শাল কিনেছিল- লাল সুতোয় ‘ভালোবাসি’ খোদাই করে দিয়েছিল কাপড়ের এক কোনে।

রূপা তবু কাঁদতো। রেগে ফোন কেটে দিয়েছিল কাল-‘ আসতে হবে না তোমায়।’

অশান্ত মন বাধ মানেনা- রিং করে আবার। নট রিচেবল এর টোন আরো অশান্ত করে দেয় রুপাকে।

পাতালবাসের কাছে টগবর জঙ্গল- অস্ত্র কারখানার হদিশ পেয়ে বেরিয়ে গেছিল অমিতাভ।

গুলি। পাল্টা গুলি।

গরম সিসার গুলি জানতো না অমিতাভ সবে জীবন শুরু করেছে। অমিতাভ বিয়ে করেছে তিন মাস। অমিতাভ 27 বছরের একটা কুঁড়ি। ধ্বংস করে দিলো একটা জীবন। একটা পৃথিবী।

ছিঁড়ে ফেলেছিল অমিতাভের হৃদপিণ্ড।
ছিঁড়ে ফেলে দিলো রুপার হৃদপিণ্ড।
এক ঝটকায় উড়িয়ে নিয়ে গেল অমিতাভ-রুপার সব স্বপ্ন।
আগুনের হলকা জানত না, রুপা- অমিতাভের কথা শেষ হয় নি। অনেক কিছু বলার ছিল দুজনের। অনেক কিছু।

বৃদ্ধ, অসুস্থ বাবার ওষুধের হিসেব জানতো না
এ কে-47 এর কার্তুজ।
খাওয়ার টেবিলে কাকিমার চোখের জলের কারণ জানত না কালাশনিকভ।

দাদার মেয়ের জন্য কেনা পুতুলের মন কেন খারাপ, খোঁজ নেয়নি ওরা।

যারা সব জানত, খোঁজ রাখেনি তারাও।

কেউ খোঁজ রাখেনি।
কেউ না।

ক্ষমা করিস অমিতাভ।

Tan Moy Dey-এর ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*