অনুগল্পঃ আগুনপাখি

নির্মলেন্দু কুণ্ডুঃ

দাঁতে দাঁত চেপে বইমেলা থেকে বেরিয়ে আসছে অরিন্দম৷একটা দীর্ঘ-লালিত স্বপ্ন হঠাৎ ভেঙে গেলে যে ঝড়টা বয়ে যায় মনের ওপর দিয়ে,তার স্পষ্ট আভাস ওর চোখে-মুখে৷

মফস্বলের ছেলে অরিন্দমের লেখালেখির শখ স্কুল জীবন থেকেই৷তারপর বড় হতে হতে সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আস্তে আস্তে সেই চারাগাছের বনস্পতি হওয়ার চেষ্টা৷সেসময়ই ওর সাথে পরিচয় প্রবীরদার৷নতুনদের লেখায় উৎসাহ দিতে ওর জুড়ি মেলা ভার৷নিজস্ব একটা প্রকাশনা সংস্থাও আছে৷ও-ই প্রস্তাবটা দেয় অরিন্দমকে৷

—”তোর এই লেখাগুলোকে দু’ মলাটের মধ্যে আন৷দেখবি আরও কত লোক তোর লেখার পাঠক হবে৷”

—”কিন্তু সে যে অনেক টাকার ধাক্কা দাদা৷চাকরি-বাকরি নেই৷

—আরে বাবা,এ তো ওয়ান টাইম ইনভেস্টমেন্ট৷তারপর ভাব,তোর লেখা চেনা-অচেনা মহলে ছড়িয়ে পড়বে৷আর তোর যা লেখার হাত,বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলো তোর লেখা নিজে থেকে নেবে৷প্রাথমিক পরিচয়টা বড় কথা রে৷

বাবাকে বলেছিল অরিন্দম৷বাবা ওর স্বপ্নের পথে বাধা হননি৷প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকেই টাকা তুলে দিয়েছিলেন ওর হাতে৷আজ সেই কাঙ্খিত দিন৷প্রবীরদা নিজেই সব দায়িত্ব নিয়েছে,প্রুফ চেকটুকুও অরিন্দমকে করতে দেয়নি৷বলেছে, সোজা সন্তানকে কোলে নিবি৷সেই আনন্দেই সকাল-সকাল বইমেলায় প্রবেশ করেছে ও,ওর “আগুনপাখি”-কে হাতে নেবার ব্যাকুলতায়৷বার কয়েক ফোন করেও “এই আসছি” ছাড়া উত্তর পায়নি৷শেষ বেলায় যখন ও ফিরে যাবার তোড়জোড় করছে,হঠাৎ প্রবীরদা হাজির৷ওর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়েই হাওয়া৷প্যাকেট খুলে অরিন্দম হতবাক—ফিনফিনে মলাট,পাতলা কাগজ,অজস্র ভুলে ভরা,এমনকি সব লেখাও ছাপেনি৷প্রবীরদার ফোনও সুইচড্ অফ৷

চোখের জল চাপতে চাপতেই বেরিয়ে আসছে অরিন্দম৷মনে একটাই জেদ,আগুনপাখি ওকে হতেই হবে৷

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*